পবিত্র কোরআনে ফিতনা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ?

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
  • 98 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা । ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

ফিতনা শব্দটি আরবি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। বাংলা ভাষায় এটি বিশৃঙ্খলার অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রশ্ন হলো, আরবি ভাষায়ও কি তা একই অর্থে ব্যবহৃত হয়? আর পবিত্র কোরআনে ফিতনা শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? উত্তর হলো- বাংলা ভাষায় ফিতনা শব্দটি অনিষ্ট, ক্ষতি, গণ্ডগোল ও বিশৃঙ্খলার অর্থে ব্যবহৃত হয়। (ব্যাবহারিক বাংলা অবিধান, পৃষ্ঠা ৮১৩)।

অন্যদিকে আরবি ভাষায় ফিতনা শব্দটি পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের অর্থে ব্যবহৃত হয়।

যেন এর মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য করা যায়। আল্লামা ইবনে ফারেস ও ইবনে আসির (রহ.) এমনটিই বলেছেন। (তাহজিবুল লুগাহ : ১৪/২৯৬)
পবিত্র কোরআনে ফিতনা শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই এর মূল অর্থ।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘ফিতনার একটি অর্থ পরীক্ষা করা ও যাচাই করা। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভালো ও মন্দ, দান ও বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন।’ (জাদুল মাআদ : ৩/১৭০)

কোরআনে ব্যবহৃত ফিতনা শব্দের অর্থগুলো তুলে ধরা হলো-

১. পরীক্ষা করা : মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে?’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২)

২. বিচ্যুত করা, বিরত রাখা : ইরশাদ হয়েছে, ‘কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ না করো এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক হও, যাতে আল্লাহ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত না করে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৯)

৩. শাস্তি বা নির্যাতন : মহান আল্লাহ বলেন, ‘ যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, তোমার প্রতিপালক এসবের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১০)
৪. কুফর বা শিরক : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৩)। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, আয়াতে ফিতনা দ্বারা শিরক উদ্দেশ্য।

৫. কপটতা ও পাপে লিপ্ত হওয়া : মুনাফিকদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘ মুনাফিকরা মুমিনদের ডেকে জিজ্ঞাসা করবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? তারা বলবে, হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদগ্রস্ত করেছ।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৪)। ইমাম বাগাভি (রহ.) আয়াতের অর্থ এভাবে তুলে ধরেছেন, কিন্তু তোমরা নিফাকিতে লিপ্ত ছিলে এবং পাপকাজ ও প্রবৃত্তি পূজার মাধ্যমে নিজেদের ধ্বংস করেছিলে।

৬. বিশৃঙ্খলা : আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে তারা পরস্পরের বন্ধু, যদি তোমরা তা (মুমিনদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ) না করো, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৭৩)
৭. পথভ্রষ্ট করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ যার পথচ্যুতি চান তার জন্য আল্লাহর কাছে তোমার কিছু করার নেই।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪১)

৮. হত্যা ও বন্দিত্ব : ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে অবিশ্বাসীরা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে নামাজ সংক্ষিপ্ত করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০১)। ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, আয়াতে ফিতনা দ্বারা মুসলমানদের ওপর অমুসলিমদের হামলা, হত্যাকাণ্ড ও তাদের বন্দি করা উদ্দেশ্য।

৯. অন্তরের বিক্ষিপ্ততা : আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাদের সঙ্গে বের হলে তোমাদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করত এবং তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছোটাছুটি করত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৭)।তাফসিরে কাশশাফে আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তারা তোমাদের ভেতর মতবিরোধ সৃষ্টির জন্য ছোটাছুটি করত।

১০. বিপদে ফেলা : আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাসী নর-নারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আছে দহন যন্ত্রণা।’ (সুরা : বুরুজ, আয়াত : ১০)

আল্লাহ সবাইকে ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!