উম্মে আহমাদ ফারজানা। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
পরকীয়া পারিবারিক অশান্তির কারণ। এর জের ধরে ভেঙে পড়ছে পরিবার কাঠামো। ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন-সাধ। কখনো কখনো মারামারি ও খুনখারাবির মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে পরকীয়ার কারণে।
পরকীয়া মানুষকে ব্যভিচারের দিকে টেনে নেয়। অথচ এটি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল/ইসরা, আয়াত : ৩২)
বরং পরকীয়া ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য পাপ। পরকীয়ার মূল উদ্দেশ্যই থাকে জেনা (অবৈধ সম্পর্ক)। আর তা গড়ে ওঠে সাধারণত নিকটতম কিংবা দূরবর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে। কখনো অফিস কলিগের সঙ্গে কিংবা পরিচিতজনের সঙ্গে।
তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা বলেন, এটি হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির ১০ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জঘন্য অপরাধ। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০২)
নিম্নে পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
আল্লাহর ভয় : বিবাহের খুতবায় পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করতে হয়, যা যথাক্রমে সুরা নিসা, আয়াত : ১, সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২ এবং সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১। (সূত্র : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১১৮)
এই তিন আয়াতের মূল কথা হলো আল্লাহর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত রাখা। গভীর আল্লাহভীতি না থাকলে পারিবারিক জীবনের এই সঙ্গিন পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন। প্রকৃত আল্লাহভীতি মানুষকে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত রাখতে পারে।
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা বিধান : মুসলিম বিবাহে সমতা বিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে ‘কুফু’ বলা হয়। অর্থাৎ বর ও কনের সমান-সমান হওয়া, একের সঙ্গে অন্যজনের সামঞ্জস্য হওয়া। তবে সেটি প্রধানত গণ্য হবে দ্বিন পালনের ব্যাপারে।
ইমাম খাত্তাবি (রহ.) তাই লিখেছেন, বহুসংখ্যক মনীষীর মতে, চারটি বিষয়ে কুফু বিবেচনা করবে : দ্বিনদারি, স্বাধীনতা (আজাদি), বংশ ও শিল্প-জীবিকা। তাদের অনেকে আবার দোষত্রুটিমুক্ত ও আর্থিক সচ্ছলতার দিক দিয়েও কুফুর বিচার গণ্য করেছেন। ফলে কুফু বিচারের জন্য মোট দাঁড়াল ছয়টি গুণ। হানাফি মাজহাবে কুফুর বিচারে বংশমর্যাদা ও আর্থিক অবস্থাও বিশেষভাবে গণ্য।
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং সমতা (কুকু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৯৬৮)
পরিবারে ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা : ইসলামী শিক্ষা, পর্দা প্রথা, দৃষ্টি নিম্নগামী রাখার নির্দেশ, বিনা প্রয়োজনে মাহরাম থেকে দূরে থাকার বাস্তবধর্মী আমলগুলো মানুষকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। স্ত্রীর দ্বিন-দুনিয়ার প্রয়োজনমাফিক শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করাও স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার। এ ক্ষেত্রে কোরআনে নির্দেশ হলো, ‘তোমরা তোমাদের নিজেকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
পরিপূর্ণ পর্দা করা : পরকীয়া থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হলো পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলা। বেপর্দা চললে পরে পরকীয়ার দিকে ধাবিত হয়। মুসলিম নারীর ওপর পর্দা ফরজ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনা স্ত্রীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের বড় চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা আহজাব, হাদিস : ৫৯)
প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ : বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পরকীয়া অনেক সহজ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফ্রি কলিং অ্যাপ ও মোবাইল ফোন এই কাজটি ভীষণ সহজ করে দিয়েছে। এখন আর কারো সঙ্গে দেখা করার জন্য গোপনে তার ঘরের পেছনে গিয়ে মশার কামড় খেতে হয় না। মুঠোফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে এক মুহূর্তেই প্রেমিকার দেখা পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
মহান আল্লাহ আমাদের সুখময় দাম্পত্য জীবন দান করুন।
Leave a Reply