জাওয়াদ তাহের । ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
একজন মানুষ যখন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তখন তার করণীয় কী ? এ ব্যাপারে বিশ্বনবী আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। জায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এক ব্যক্তির (শরীর) জখম হয়েছিল। সেই জখমে রক্ত জমে গিয়েছিল। অতঃপর লোকটি বনি আনমার গোত্রের দুই ব্যক্তিকে (ওটার চিকিৎসার জন্য) ডেকে আনল।
তারা এসে (যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে) দেখল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের উভয়ের মধ্যে কে চিকিৎসায় বেশি অভিজ্ঞ ? তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! চিকিৎসা করার ফলে কোনো উপকার আছে কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওষুধ তো তিনিই নাজিল করেছেন, যিনি রোগ নাজিল করেছেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৬৯৯)
ওপরের এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়, যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা যেন অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করি এবং অভিজ্ঞদের শরণাপন্ন হই। কারণ তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা করাবে :
আল্লাহ তাআলা সব রোগের ওষুধ সৃষ্টি করেছেন। এমন কোনো ব্যাধি নেই, যার ওষুধ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেননি। তবে মানুষকে রোগ নির্ণয় করে সেই ওষুধ খুঁজে পেতে অনেক সময় বেগ পেতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন কোনো রোগ পাঠাননি, যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৮)।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা পাঁচ ধরনের :
এক. অভিজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন এবং তিনি সঠিকভাবে চিকিৎসা করেছেন। এর পরও যদি কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ওপর কোনো দায়ভার নেই। যেমন—কোনো শিশুর খতনা করানো হলো, সেই ছেলেটি খতনার উপযুক্ত বয়সে ছিল। আর ডাক্তার সঠিক পদ্ধতিতে তাকে খতনা করেছেন। এর পরও শিশুটির কোনো কারণে অঙ্গহানি হয়ে গেলে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ওপর কোনো ধরনের জরিমানা আসবে না।
দুই. যে ব্যক্তির চিকিৎসা করা হচ্ছে , তিনি যদি আগে থেকেই জানেন যে চিকিৎসক আনাড়ি। তাঁর অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তাঁকে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দিয়েছেন, তাহলে এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা করার কারণে ক্ষতি হলে কোনো ধরনের জরিমানা আসবে না। আর যদি রোগী জেনে থাকেন, তিনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। এই হিসেবেই তাঁকে চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর যদি কোনো ধরনের অঙ্গহানি ঘটে, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই আনাড়ি চিকিৎসককে এর দায়ভার বহন করতে হবে।
আমর ইবন শুয়াইব (রহ.) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনায় বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লোকের চিকিৎসা করে, অথচ সে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত নয়, সে (রোগীর জন্য) দায়ী থাকবে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৮৩০)।
তিন. অভিজ্ঞ চিকিৎসক। রোগী তাঁকে চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছেন। এবং চিকিৎসক সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু অপারেশনে তাঁর হাত কিছু ভুল করে ফেলেছে। তাহলে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
চার. চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে প্রেসক্রিপশন করেছেন, এবং তিনি তাঁর প্রেসক্রিপশনে ওষুধ ভুল লিখেছেন। এ কারণে রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। তাহলে এর ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে দুটি মত আছে। এক, বায়তুল মাল থেকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবে। দুই, চিকিৎসকের আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন, তাঁদের মধ্য থেকে এটার ক্ষতিপূরণ আদায় করবে।
পাঁচ. অভিজ্ঞ চিকিৎসক, তিনি সঠিকভাবেই কাজ করেছেন। কিন্তু যার চিকিৎসা করেছেন, তার থেকে অনুমতি নেননি। বরং অনুমতিবিহীন চিকিৎসা করার পর কোনো ধরনের ক্ষতি হলে, এ ক্ষেত্রেও তাকে জরিমানা দিতে হবে। কারণ তিনি সঠিকভাবে চিকিৎসা করলেও অনুমতি না নিয়ে সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
(জাদুল মাআদ অবলম্বনে)।
Leave a Reply