আইনেই দুদকের ক্ষমতা দন্তহীন

  • আপডেট সময় বুধবার, নভেম্বর ২২, ২০২৩
  • 124 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২২ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

আইনের সংশোধনী এনে ক্রমেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। বছর দশেক আগেও গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা ছিল দুদকের। অনুসন্ধান, তদন্ত অথবা যেকোনো পর্যায়ে সন্দেহভাজনসহ যে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব ছিল। তফসিলভুক্ত প্রায় সব অপরাধই ছিল আমলযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য।

বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক, অবরুদ্ধ ও জব্দ করা এবং আসামি বা সাক্ষী যে কারও বিরুদ্ধে সমন অথবা পরোয়ানা জারি করতে পারতেন দুদক কর্মকর্তারা। যেকোনো ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের তথ্য সরাসরি ও দ্রুত সংগ্রহ করাও সম্ভব ছিল।

কিন্তু ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে আইনের সংশোধনী এবং ২০২৩ সালে আয়কর আইন করার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দুদকের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে প্রতিবন্ধকতা এবং চলতি বছর আয়কর আইনে তথ্য সুরক্ষার বিধান দুদকের স্বাভাবিক কাজে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আইনে সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান রাখা হয়েছে।

সরকারি চাকরিজীবী যত দুর্নীতিবাজই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পূর্বানুমতির প্রয়োজন। এ কারণে হাতে-নাতে ঘুষখোর ধরতে ‘ফাঁদ অভিযান’ পরিচালনা এখন প্রায় বন্ধ। দুদক আইনে মিথ্যে তথ্য প্রদান ও মিথ্যে মামলাকারীর ২ থেকে ৫ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সম্পূর্ণভাবে যাচাই ও সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে মামলা বা চার্জশিট দিচ্ছেন না। শাস্তির ভয়ে তাদের স্বাভাবিক কাজে ধীরগতি ও অনীহা দেখা দিয়েছে। সংশোধনীতে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনসহ দুর্নীতি সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধের কয়েকটি ধারা দুদকের তফসিলে রাখা হয়েছে। প্রতারণা, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধসহ অন্য ধারাগুলো ফিরেছে পুলিশের কাছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি অপরাধের মধ্যে মাত্র দুইটি তদন্তের এখতিয়ার পেয়েছে দুদক। স্বতন্ত্রভাবে দুদকের প্রধান কাজ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ। কিন্তু বিদ্যমান আয়কর আইনে তাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আদালতের আদেশ ছাড়া রাজস্ব বিভাগ থেকে কোনো তথ্য পাচ্ছে না দুদক। ফলে অবৈধ সম্পদসংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান অসম্পূর্ণ থাকছে।

তদন্তকাজেও বিঘ্ন ঘটছে। যার প্র্রভাব পড়ছে বিচারিক কাজেও। বিচারকাজ শুরু করতেই চলে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। এর সুবিধা পাচ্ছে আসামিরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনে দুদকের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে। দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা করতে মামলা বা গ্রেপ্তারের বিধান রেখে একটি গোষ্ঠীকে বিশেষভাবে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। বিষয়টি আদালতেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের ২৭টি অপরাধের মধ্যে মাত্র দুটিতে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এতেও দুদকের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত হয়েছে। আয়কর আইনেও দুদকের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে মূলত দুদকের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। ফলে দুর্নীতি দমনে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে দুদককে পুরোপুরি দায়ী করা যাবে না। এতে সরকারও দায়ী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার কথা বলে আসছেন, যা তার স্ববিরোধী বক্তব্য বলেই মনে হচ্ছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে পর পর আইনগুলো জারি হয়েছে। তাই, আমাদের এসব আইন মানতে হবে। তাছাড়া সব কাজ ভালোভাবেই চলছে। স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপাতত দুদকের কাজে বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

বিদ্যমান আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে দুদকের কোনো বাধা নেই। এনবিআরসহ কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা যেত। এখন আদালতে আবেদন করে তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে।

আদালতও এ ধরনের আবেদন মঞ্জুর করে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। ফলে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহে কোনো বাধা নেই। কারও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, অর্থ-সম্পদ অবরুদ্ধ বা জব্দ করতেও আদালতের মাধ্যমে দুদকের পক্ষে আদেশ-নির্দেশ পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তবে, দুদককে শক্তিশালী করতে ফের আইন সংশোধনের চেষ্টা চলছে। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে। দুদকের সবচেয়ে আলোচিত চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর আগেই পদত্যাগ করেন।

২০০৯ সালের ২ এপ্রিল তিনি বিদায় নিলে দুদকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন সাবেক আমলা গোলাম রহমান। দায়িত্ব নেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি ঘোষণা করেন ‘দুদক নখদন্তহীন বাঘ’। এ ক্ষেত্রে তিনি দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতা ও বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতিকে দায়ী করেন। কিন্তু সেসময়ও দুদক আসামি গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতাসহ আইনগতভাবে অনেক শক্তিসম্পন্ন ছিল। তারপরও গোলাম রহমান অনেকটা হতাশ হয়ে মেয়াদ শেষে ২০১৩ সালের ১৯ জুনে বিদায় নেন। এর কয়েক মাস পর ওইব ছর ডিসেম্বরে দুদক আইনের ব্যাপক সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনীতে দুদকের কিছু বিষয়ের জটিলতা নিরসন হয়। তবে ক্ষমতা কমানো হয়।

নিষ্ক্রিয়তা দিয়ে শুরু : ২০০৪ সালে নতুন আইনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করা হয়। এ আইনেই প্রতিষ্ঠা হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আইনে মামলা, চার্জশিটসহ সব অনুমোদন সরকারের পরিবর্তে কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়। কিন্তু বিধিমালা না থাকায় প্রথম নিযুক্ত কমিশন দুর্নীতি দমনে আশানুরূপ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারেনি।

এ অবস্থায় ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তার পর ওই বছর ১০ ফেব্রæয়ারি পদত্যাগ করেন কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান বিচারপিত সুলতান হোসেন খান। এ সময় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর একই বছরের ১৮ এপ্রিল ৬টি বিষয় অর্ন্তভুক্ত করে দুদক আইনের সংশোধনী আনে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার।

সেগুলো হলো- এক. ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৎকালীন দুদক সচিব মোখলেছুর রহমানের অনুমোদন করা সার্বিক কার্যক্রমের বৈধতা প্রদান।

দুই. গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা প্রদান। অর্থাৎ অনুসন্ধান-তদন্ত অথবা যেকোনো পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়। তিন. জামিন অযোগ্যতা ও অপরাধের আমলযোগ্যতা। চার. কমিশনের অনুমোদন অপরিহার্যতা। পাঁচ. বিধির অবর্তমানে আদেশ দ্বারা কার্যক্রম পরিচালনা। ছয়. মানিলন্ডারিং আইন-২০০২ দুদকের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা।

এই সংশোধনীতেও দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতা কাটেনি। নিজ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে একই বছর ২১ নভেম্বর আবারও আইন সংশোধন করা হয়। এতে সংস্থাটিকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ-এর পাশাপাশি ‘স্বশাসিত’ করা হয়।

এতকিছুর পরেও দুদক আইনে দুর্বলতা থেকে যায়। দুদকের মামলায় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচার কার্যক্রমে দুদককে পাশ কাটিয়ে শুধু রাষ্ট্রকে পক্ষ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুদককে জানানোই হয় না। এ ক্ষেত্রে বিচারকাজে আইনানুগভাবে পিছিয়ে পড়ে দুদক। পরোক্ষভাবে এর সুফল পায় আসামিরা। ফলে দুর্নীতির মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করতে ২০০৮ সালে তৃতীয় দফা আইন সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠায় কমিশন। কিন্তু বিষয়টির সুরাহা না করেই বিদায় নেয় তত্বাবধায়ক সরকার।

দুদককে শক্তিশালী করার চেষ্টা : ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় এসে দুদককে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেয়। এ জন্য আইনের ব্যাপক সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দুদককে তার মামলায় পক্ষভুক্ত করার বিধান রেখে ২০১৩ সালে আইনের সংশোধনী সংসদে পাশ হয়। এতে মূল আইনে সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জনসহ ১৩টি সংশোধনী আনা হয়।

দুদককে শক্তিশালী করতে মূল আইনের ‘২ক’ উপধারা সংযোজন করে বলা হয়, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, এ আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে। দুদক আইনের ৩৩-এর উপধারা ৫ সংযোজন করে বলা হয়- দুদক গৃহীত যেকোনো কার্যক্রমের যেকোনো পর্যায়ে কোনো আদালতে কেউ কোনো ধরনের প্রতিকার চাইলে মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করতে হবে।

সীমিত করা হলো ক্ষমতা : ২০১৩ সালের সংশোধনীতেই দুদকের ক্ষমতা সীমিত করতে বেশ কিছু ধারা সংযোজন-পরিমার্জন-পরিবর্ধন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম সংযোজিত ধারা ‘৩২ক’। এ ধারায় উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। সংযোজিত ২৮গ ধারায়-মিথ্যে তথ্য প্রদান ও মিথ্যে মামলা দায়েরকারীর ২ থেকে ৫ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়।

বলা হয়, কমিশন বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সাধারণ নাগরিক যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মিথ্যে তথ্য প্রদান করলে কমপক্ষে দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য সশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই ধারা মামলাকারী ও সাক্ষীদের মধ্যে প্রবল আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

দুর্বল করতে আরও সংশোধন : ২০১৬ সালে আরও একবার আইনের সংশোধন করে সরকার। এতে অন্তত ১০ ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়। এর মধ্যে ‘২৮ক’ ধারায় জামিনযোগ্যতার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫-এর তফসিল ২ অনুসরণ করতে বলা হয়।

অর্থাৎ, দুই থেকে ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান আছে (অস্ত্র মামলা বাদে) এমন অপরাধের ধারা জামিনযোগ্য এবং আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া সংশ্লিষ্ট আসামিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ১৯ ধারার ‘ক’ উপধারায় বলা হয়- সাক্ষীর সমন শব্দের পরিবর্তে ‘সাক্ষীর প্রতি নোটিশ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে এবং ‘পরোয়ানা’ শব্দের পরিবর্তে ‘নোটিশ’ শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে’।

২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমামালা-২০০৭-এরও সংশোধনী আনা হয়। এতে কারও স্থাবর-অস্থাবর অথবা কোনো ধরনের সম্পদ আটক, অবরুদ্ধ বা ক্রোক করতে হলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০০৭ সালে বিধিমামলায় দুদক সরাসরি যে কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং যেকোনো স্থাবর সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতো।

সংশোধনীর পর প্রতি ক্ষেত্রেই দুদককে আদালতের আদেশ-অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এমনকি কাউকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতেও আদালতের আদেশের প্রয়োজন। দুদকের আইন বা বিধিমালায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় বিদেশযাত্রায় দুদকের নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করেছে। আপিল নিষ্পত্তিও হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না, দুদকের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বৈধ কি-না।

সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেপ্তারে প্রতিবন্ধকতা: দুদকের ২০১৩ সালে সংশোধিত আইনের ৩২(ক) ধারায় দুর্নীতির দায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধানসংবলিত অতিরিক্ত সুবিধার বিষয়টি অবৈধ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) হুবুহু একই বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটিকেও অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। বর্তমানে আপিল বিভাগের আদেশে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত আছে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেপ্তারে প্রতিবন্ধকতা থেকেই গেছে। ফলে দুদক এখন আর কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সরাসরি গ্রেপ্তার করতে পারছে না।

আয়কর আইনেও ক্ষমতা খর্ব : ১৮ জুন ‘আয়কর আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আইনের অংশ-২১-এ সংযুক্ত ৩০৯ ধারায় ‘তথ্য সুরক্ষা’ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, এ ধারার বিধান সাপেক্ষে সব বিবরণ বা তথ্য গোপনীয় থাকবে এবং সেটি প্রকাশ করা যাবে না।

সাক্ষ্য আইন-১৮৭২, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ বা অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট রিটার্ন বা রেকর্ড প্রজাতন্ত্রের কোনও কর্মচারী কর্তৃক উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান বা সাক্ষ্য-প্রমাণ তলব করতে পারবে না। তবে দন্ডবিধি-১৮৬০ ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর অধীন কোনও অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে আমলি আদালত আদেশ করলে রিটার্ন বা রেকর্ড প্রদান করা যাবে।’ ফলে, অবৈধ সম্পদ ও সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তের ক্ষেত্রে আয়করের কোনো তথ্য পেতে দুদকের অবশ্যই আমলি আদালতের আদেশ থাকতে হবে।

স্বশাসিত কিন্তু সাংবিধানিক নয় : দুদক স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত হলেও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। নির্বাচন কমিশনসহ দেশের অন্যান্য কমিশনগুলোর মতো সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্রপতি এবং সরকারকে কয়েকবার জানিয়েছে দুদক। রাষ্ট্রপতিকে দেয়া প্রায় প্রতিটি বার্ষিক প্রতিবেদনেও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেছে দুদক।

কমিশন মনে করে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের একটি সাংবিধানিক সংস্থা। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো দুর্নীতি দমন কমিশনকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তাই সংবিধানে দুদককে সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতা প্রদান ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এতে কোনো সরকার চাইলে আইন বাতিলের মাধ্যমে দুদককে বিলুপ্ত করতে পারবে। তবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তা ছাড়া সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আর আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!