নির্বাচনে আশঙ্কার বিষয় কিশোর গ্যাং

  • আপডেট সময় সোমবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
  • 74 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৬ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। গড়ে ওঠতে পারে আরও নতুন নতুন গ্রুপ। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ের অপরাধীচক্র ও রাজনৈতিক নেতারা এসব কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে আছে। আর নির্বাচনের কাজে লাগাতে তারা নতুন নতুন গ্যাং তৈরিতে ইন্ধন দিচ্ছে।

পুলিশ জানায়, প্রায় ১৫ বছর আগে ঢাকার উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা প্রথম নজরে আসে। এরপর তা আর কখনোই থামেনি। সেই কিশোর গ্যাং এখন ঢাকাসহ সারাদেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। গত জুলাই মাসে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা কিশোর গ্যাং পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক করেন।

তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেন যে কিশোর গ্যাং কালচার সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তারা বিশ্লেষণে দেখেন হত্যা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যাতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত নয়। তাদের এই অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কিশোর গ্যাংগুলোর নেপথ্যে আছে প্রভাবশালীরা। বিশেষত রাজনৈতিক নেতা এবং হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে থাকে।

তারা তাদের রাজনৈতিক শো-ডাউন থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে এসব গ্যাংকে কাজে লাগায়। অস্ত্র দেয়, অর্থ দেয়। ফলে গ্যাংয়ের সদস্যরাও নিজেদের ক্ষমতাধর মনে করে এবং কাউকে পরোয়া করতে চায় না। জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২৫টি। ওই সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে ১১০টি গ্যাং-এর সদস্য। আর ১১০টি গ্যাংয়ের সদস্য প্রায় এক হাজার। ওই সময়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের ৫২৯ জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক মাদকের কারবার, মাদকসেবন, মাদক সরবরাহ, ছিনতাই, ইভটিজিং, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িত বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।

পুলিশের ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচনে কিশোর গ্যাং সক্রিয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা তাদের কাজে লাগাতে পারে। সেটা হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। গাজীপুর সিটিসহ স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে কিশোর গ্যাংয়ের কদর দেখা গেছে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, হতাশা আর হিরোইজম থেকে কিশোর গ্যাংগুলো তৈরি হয়। একেক এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের প্রেক্ষাপট একেক রকম। অভিজাত এলাকায় উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোররা হিরোইজম থেকে কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত হয়। আবার বস্তি বা নিম্নবিত্ত এলাকায় এটা হয় হতাশা থেকে। তবে এখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব তাদের প্রলুব্ধ করে। গ্রুপগুলো তাদের কাজের জন্য এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারও করে।

তার কথা, এই কিশোর গ্যাংগুলো স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠলেও অনেক সময়ই স্থানীয় পর্যায়ের বড় অপরাধী, গডফাদার বা রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যবহার করে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র তাদের কাজে লাগায়। এমনকি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রও তাদের ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলার জন্য এই কিশোর গ্যাংগুলো উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যদি আগামী নির্বাচনে তাদের স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা ব্যবহার করেন তাহলে তাও হবে উদ্বেগের বড় কারণ। এখন পর্যন্ত তাদের তেমন ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই। কারণ এ সময়ে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে , তাতে ভোটার তেমন ছিল না। তবে তাদের ব্যবহার করা যায়। এটাই আশঙ্কার বিষয়।

বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ‘নন্দিত শৈশব এবং বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ ও গ্যাং কালচার’ শিরোনামে একটি বইও প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, কিশোর অপরাধের ইতিহাস অনেক পুরনো। তবে সেই সময়ে তা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। এখন কিশোর গ্যাং গুলো হত্যাকাণ্ডসহ বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর মূল কারণ পারিবারিক শাসন এবং মূল্যবোধের ধস। একই সঙ্গে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কিশোরদের অপরাধ ও অপরাধের কৌশলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এখানে তেমন নজরদারি নেই। আর তাদের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের পরিসরও সীমিত হয়ে গেছে। ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

তার কথা, এই কিশোরদের আবার সংঘবদ্ধ অপরাধীরা, হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা ব্যবহার করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কিশোরদের ভেতর এক ধনের হিরোইজম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা তাদের অপরাধে যুক্ত করছে।

তিনি মনে করেন, সামনের নির্বাচনে এই কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে। সেটা হলে এই গ্যাং আরও বাড়বে।

পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একা এখানে কিছু করতে পারবে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালের এই কিশোরদের সবাই মিলে ঠিক মতো গাইড করতে হবে। তাদের সামনে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের বিকাশের ভালো পরিবেশ দিতে হবে। তা না হলে এই কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করা কঠিন,’ মনে করেন এই অধ্যাপক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!