——————————————————————————————-
প্রতারণার শিকার রোগী ও স্বজন
——————————————————————————————-
দিশারী ডেস্ক।১৯ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
নোয়াখালীর প্রায় উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার নামে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থাপনা। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে চলছে নামমাত্র চিকিৎসা। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতিনিয়তই অপচিকিৎসা এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে ওঠেছে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে বেশির ভাগেরই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই।
অনুমোদনবিহীন এসব ক্লিনিক বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। অধিক মুনাফার লোভে প্রয়োজনীয় ও দক্ষ চিকিৎসক ছাড়া হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদান করায় প্রায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত নার্সদের স্বল্পতা রয়েছে। অনেকগুলোতে আয়রাই নার্স সেজে বসে থাকেন। আবার অনেকগুলোতে কিছু পল্লী চিকিৎসকও বসে থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেয়ারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের আলমারিতে প্রচুর ওষুধ সংরক্ষণ করা হয়, যা নিয়ম বর্হিভূত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কালার কোর্ড মেনে করা হয় না। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। কোনোরকম একটি ভবন ভাড়া নিয়েই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও রি-এজেন্ট, ভুয়া রিপোর্ট, অদক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও নোংরা পরিবেশে পরিচালিত হয় এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে হাসপাতালের অপচিকিৎসার খবর প্রকাশিত হলে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং র্যাব-৪-এর যৌথ সমন্বয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দফায় অভিযান চালিয়ে সিলগালা, জরিমানা, কারাদণ্ড প্রদান করলেও থেমে নেই অর্থলোভী এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অপতৎপরতা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেবা দেয়ার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর অপারেশন থিয়েটার, নিয়ম না মেনে অনভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কারণে রোগীরা এসব হাসপাতাল থেকে যথোপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
এ জেলায় অধিকসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ বসবাস করলেও এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার সংকট রয়েছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিকিৎসা খাতকে জিম্মি করে রেখেছে।
আরো অভিযোগ, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা এলাকাভিত্তিক মাস্তানদের মাসোহারা দিয়ে পুশে থাকেন। ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় কোনো রোগী মারা গেলে কিংবা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মস্তানরা রোগীর আত্মীয়স্বজনদের মামলা করা থেকে বিরত রাখা এবং এ বিষয় নিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন অভিযোগে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানেও টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। নিবন্ধনবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হবে।
Leave a Reply