দিশারী ডেস্ক। ২১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
দেশের কারাগারে বন্দিদের এক-তৃতীয়াংশই মাদক মামলার আসামি। তাদের বেশির ভাগই আবার মাদকাসক্ত। তবে কারাগারে তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা। এ কারণে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরও তাদের বেশির ভাগই আবারও মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
কারা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৯৩৭ এবং নারী ১ হাজার ৯২৯ জন। অন্যদিকে কারাগারগুলোতে বর্তমানে মোট বন্দি আছেন ৭৭ হাজার ২০৩ জন, যা ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে বন্দিদের এক-তৃতীয়াংশই মাদক মামলার আসামি। অর্থাৎ তাদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।
নোয়াখালী কারাগারে মাদক মামলায় বন্দি আকবর হোসেনের (ছদ্মনাম) বোন শেফালি বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘ আকবর মাদকাসক্ত, এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কারাগারে আছে সে। অতীতে বেশ কয়েকবার জামিনেও বেরিয়ে এসেছিল। তবে কারাগারে থেকে তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে বের হয়ে আবার মাদক সেবন ও ব্যবসা করে। ’
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের বলেন, কারাগারে মাদক মামলায় যেসব বন্দি রয়েছেন, তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত। তাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করতে নিরাময় কেন্দ্রের মতো রুটিংমাফিক সেবা প্রয়োজন, যা কারাগারে হয় না বললেই চলে।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই মিটিংয়ে আলোচনা হয়। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
মাদকসেবী একজন ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। এ ছাড়া তারা সুস্থ হওয়ার পরে তাদের ফলোআপের প্রয়োজন হয়।
দেশের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দিদের যেসব যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাতে তারা সুস্থ হয় না। বন্দিদের জন্য ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞও নেই সেখানে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন রোগীকে আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।’
এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরও জানান, কারাগারে ফরেনসিক পুলিশ ও ফরেনসিক সাইক্রিয়াটিস্ট নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীর বোর্ড গঠন করেই চিকিৎসা দেয়া হয়। এসব বন্দি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে না পারলে মুক্তির পর এরা আবার মাদক সেবন ও অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন।
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক বলেন, মাদক মামলায় যারা বন্দি রয়েছে তাদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়। তবে কারাগারের ভেতরে তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, ‘কারাগারের মাদকাসক্ত বন্দিদের চিকিৎসায় আমাদের কোনো নিজস্ব ডাক্তার নেই। কারাগারের পাশে সরকারি নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসক ও কনসালট্যান্ট এনে তাদের সেবা দেয়া হয়।’
কারাগারে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার বন্দিদের আলাদা কোনো নিরাময় কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে কি না, জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারে এসব বন্দিকে যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। ভেতরে নিরাময় কেন্দ্রের মতো একটি সেল গঠন করে চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হতো।
Leave a Reply