রংপুরে এখনো টয়লেট ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ?

  • আপডেট সময় সোমবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
  • 35 পাঠক

————————-
খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার সবচেয়ে বেশি 

————————

দিশারী ডেস্ক। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার কমলেও গত বছর থেকে এ বছর তা কমেনি। বরং অপরিবর্তিত রয়েছে এই হার।

গত নভেম্বরে প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ১ দশমিক ২৩ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে। যা গত বছরও একই ছিল। আর দেশের আট বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার সবচেয়ে বেশি। এর পরের অবস্থানে আছে সিলেট বিভাগ।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, আট বিভাগের মধ্যে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার সবচেয়ে বেশি রংপুরে, ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। রংপুরের পরেই আছে সিলেট বিভাগ। এখানে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার গত বছর ছিল ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা এ বছর শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। আর সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে, শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ।

দেশের অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে বরিশালে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার শূন্য দশমিক ২৯, খুলনায় শূন্য দশমিক ৩৩, চট্টগ্রামে শূন্য দশমিক ৮৮, ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৫৪ ও রাজশাহীতে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে ৪ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৮টি খানায় বা পরিবারের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ পরিবারে ফ্লাশ করে বা পানি ঢেলে নিরাপদ নিষ্কাশনসংবলিত টয়লেট সুবিধা রয়েছে যা সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৬৮.৮৯ শতাংশ ও সর্বনিম্ন বরিশালে ৩৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। দেশের শহর অঞ্চলে ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে এ ধরনের টয়লেট সুবিধা রয়েছে যা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ, ৮০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

অন্যদিকে, অনিরাপদ টয়লেট রয়েছে দেশের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ পরিবারে এবং স্ল্যাবসহ পিট ল্যাট্রিন বা ভেন্টিলেটেড ইমপ্রুভড ল্যাট্রিন বা কম্পোস্টিং ল্যাট্রিন সুবিধা রয়েছে ২১ দশমিক ৯৭ শতাংশ পরিবারে।

দেশে এখনো ১ দশমিক ২৩ শতাংশ পরিবারে কোনো ধরনের টয়লেট সুবিধা নেই, তারা খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ করে। অর্থাৎ ৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০টি পরিবার এখনো কোনো ধরনের টয়লেট ব্যবহার করে না। এর মধ্যে কেবল রংপুরেই প্রায় ২ লাখ পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের গ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি পরিবার খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ করে। পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও ২০ হাজারের বেশি পরিবার কোনো ধরনের টয়লেট ব্যবহার করে না।

এ ছাড়া সিলেটের ৫৪ হাজারের বেশি পরিবার কোনো ধরনের টয়লেট ব্যবহার করে না। এর মধ্যে এই অঞ্চলের গ্রামে ৫৪ হাজার ১০২টি পরিবার খোলা জায়গায় মলমূত্রত্যাগ করে। আর শহরাঞ্চলে প্রায় ৪ হাজার পরিবার কোনো ধরনের টয়লেট ব্যবহার করে না।

এ বিষয়ে স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইড এর বাংলাদেশের হেড অব কান্ট্রি পরিচালক হাসিন জাহান নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, সিলেট অঞ্চল যেহেতু আগাম বন্যাসহ নিয়মিত বন্যার সম্মুখীন হয় এবং একইভাবে রংপুর অঞ্চলেও আগাম বন্যাসহ দীর্ঘমেয়াদে বন্যা হয়ে থাকে। ফলে এখানে পরিবারগুলোতে যে টয়লেট বানানো হয় তা বন্যার সময় ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এই পরিবারগুলোর একটি বড় অংশই দরিদ্র যাদেরকে বিভিন্ন এনজিও এই টয়লেটগুলো বানিয়ে দেয়। কিন্তু বন্যায় টয়লেটগুলো ভেঙে যাওয়ার পর এনজিওগুলো এগুলোর আর দেখভাল করে না বা মেরামতও করে দেয় না। ফলে ওই সব অঞ্চলের মানুষরা তখন খোলা স্থানে প্রাকৃতিক কাজ করেন অথবা কাঁচাটয়লেট ব্যবহার করেন।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দেশে ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ পরিবারে ‘একক’ টয়লেট সুবিধা রয়েছে যা পল্লিতে ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং শহরে ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক এ হার বরিশালে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ঢাকায় সর্বনিম্ন ৬৭ দশমিক ৪২ ভাগ। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরিবার অন্য পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে টয়লেট ব্যবহার করে, যা পল্লি ও শহরাঞ্চলে যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৮ ও ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এর মাধ্যমে দেখা যায় যে, সব বিভাগে একক টয়লেট ব্যবহারের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি ; এ হার বরিশালে সর্বাধিক ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে, যৌথভাবে টয়লেট ব্যবহারের পরিমাণ ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!