হাদিসে মহানবী (সা.)-এর সাহসিকতার বর্ণনা

  • আপডেট সময় রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
  • 15 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অতুলনীয় উপমা। মানবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব গুণ ও বৈশিষ্ট্য তাঁর ভেতর পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়েছিল। বীরত্ব ও সাহসিকতা ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের অন্যতম সৌন্দর্য।

ছিলেন সবচেয়ে সাহসী

পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রমাণ রেখেছেন। তাঁর বীরত্বের সাক্ষ্য দিয়ে আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দানশীল ও সবচেয়ে শৌর্য-বীর্যের অধিকারী। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০৪০)

উম্মতকে সাহসী হতে বলেছেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু নিজে সাহসী ছিলেন না, বরং তিনি তাঁর উম্মতকে সাহসী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য বলা সর্বোত্তম জিহাদ।(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৩৪৪)

তিনি কাপুরুষিকতা ও অক্ষমতা থেকে বেঁচে থাকার দোয়া শিখিয়েছেন। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫৪০)

নবীজি (সা.)-এর বীরত্বের নানা ঘটনা

সিরাত ও হাদিস গ্রন্থে বীরত্ব ও সাহসিকতার নানা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যার কয়েকটি হলো—

১. সাহস হারাননি কখনো : রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে নজদ অভিমুখে কোনো একটি অভিযানে বের হন।সেখানে একটি সবুজ উপত্যকায় কাফেলা বিশ্রামের জন্য থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি গাছের নিচে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর তরবারি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখেন। বিশ্রামের জন্য সাহাবিরা বিভিন্ন গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেন। এভাবে তাঁরা নবীজি (সা.) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।

এরই মধ্যে নবী (সা.) ঘুমিয়ে যান। তখন একজন গ্রাম্য লোক চুপি চুপি এসে তরবারি নিয়ে নেয় এবং নবীজি (সা.)-এর ঘুম ভেঙে যায়। লোকটি তরবারি উঁচু করে বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? তার ধারণা ছিল দলবল থেকে বিচ্ছিন্ন নবীজি (সা.) ভীতসন্ত্রস্ত হবেন। কিন্তু তিনি কোনো ভয়ভীতি ও সংকোচ ছাড়াই বললেন, আল্লাহ। এতে লোকটি কিছুটা ঘাবড়ে গেল। কিন্তু সে আবারও বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি একইভাবে একই উত্তর দিলেন। তৃতীয়বার নবীজি (সা.) একই উত্তর দিলে লোকটির ভেতর কম্পন তৈরি হলো এবং তার হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। (সিরাতে ইবনে হিশাম)

২. ছিলেন বিপদের আশ্রয় : যখন কোনো দুর্যোগ ও বিপদ দেখা দিত মানুষ মহানবী (সা.)-এর কাছে আশ্রয় নিত। আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, যখন আমাদের সামনে কোনো বিপদ আসত এবং জাতি শত্রুর মুখোমুখি হতো, তখন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে সমবেত হতাম। আমাদের মধ্যে তিনিই শত্রুর সবচেয়ে নিকটবর্তী হতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩৪৭)

৩. অন্ধকারে ছুটল ঘোড়া : আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, একবার রাতের বেলা মদিনায় (ভয়ংকর শব্দ হলে) ভীতি দেখা দিল। নবী (সা.) আবু তালহা (রা.)-এর একটি গদিহীন ঘোড়ায় আরোহণ করে তরবারি ঝুলিয়ে এগিয়ে গেলেন। লোকদের আশ্বস্ত করলেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, তোমরা ভয় পেয়ো না। তিনি ফিরে এসে বললেন, আমি তো কিছুই দেখতে পেলাম না। আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মতোই পেয়েছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০৪০ ও ৬২১২)

৪. একাই লড়ে গেলেন তিনি : হুনাইনের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাময়িক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল। তখন মুসলিম বাহিনীর অনেকেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। কিন্তু মহানবী (সা.) অবিচল থেকে লড়াই করে যান। বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, সেদিন তো আল্লাহর রাসুল (সা.) পালিয়ে যাননি। আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রা.) তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলেন। যখন মুশরিকরা তাঁকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি আল্লাহর নবী, এটা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, সেদিন আল্লহর রাসুল (সা.)-এর চেয়ে দৃঢ়চিত্ত আর কাউকে দেখা যায়নি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০৪২)

৫. ভয় পেয়ো না, তাকে আসতে দাও : উহুদের ময়দানে নবীজি (সা.) মুশরিকদের আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন। কিন্তু যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যাননি। তিনি যুদ্ধের ময়দানে থেকে সাহাবিদের সাহস জোগাতে থাকেন। এরই মধ্যে অভিশপ্ত উবাই বিন খালাফ নবীজি (সা.)-এর দিকে অগ্রসর হয়। তিনি বলেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, তাকে আসতে দাও। সে নিকটবর্তী হওয়ার পর মহানবী (সা.) হারিস বিন সিম্মাহ (রা.)-এর বর্শা নিয়ে উবাইয়ের বর্ম ও শিরস্ত্রাণের মাঝ বরাবর আঘাত করেন। এতে তার মৃত্যু হয়। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ২/৯৮)

৬. তাঁর অধিকার ফিরিয়ে দাও : রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়ত লাভের আগে এক ব্যক্তি মক্কায় তাঁর উট বিক্রি করতে নিয়ে আসে। আবু জাহাল তাঁর উটটি নিয়ে নিলেও ঠিকমতো মূল্য পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছিল না। নবীজি (সা.) আবু জাহালের বাড়ি যান এবং বলেন, এই পথিকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দাও। তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমি তোমার পথ ছাড়ছি না। (সিরাতে ইবনে হিশাম)

৭. একাই ভাঙলেন বিশাল পাথর : জাবির (রা.) বলেন, খন্দকের দিন আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এ সময় এক খণ্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে এলো। সাহাবিরা নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, খন্দকের ভেতর একটি শক্ত পাথর বেরিয়েছে। তখন তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে নামব। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন। আর তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তিন দিন ধরে অনাহারী ছিলাম। কোনো কিছুর স্বাদই চাখিনি। তখন নবী (সা.) একখানা কোদাল হাতে নিয়ে পাথরটিকে আঘাত করলেন। ফলে তত্ক্ষণাৎ তা চূর্ণ হয়ে বালুকা রাশিতে পরিণত হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১০১)

আল্লাহ সবাইকে সৎ সাহস দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!