দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হবে কোথায় ? মহানবী (সা.) কী বলেছেন ?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, মার্চ ৭, ২০২৪
  • 112 পাঠক

শরিফ আহমাদ । ৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

হাদিসের ভাষ্য মতে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের আগে দাজ্জালকে পাঠাবেন। সে এসেই পৃথিবীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। ধোঁকা ও প্রতারণায় মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেবে।

তার ভয়াবহ ফিতনা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, আদম (আ.) থেকে কিয়ামত কায়েম হাওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে কোনো ফিতনা বড় নয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৪৬)।

সে হবে ইহুদিদের স্বপ্নের নায়ক। একত্রে ৭০ হাজার ইহুদি তার আনুগত্য মেনে নেবে। রাসুল (সা.) তার ফিতনার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। উম্মতের জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তাই দাজ্জাল সম্পর্কে জ্ঞান রাখা সবার জন্য জরুরি।

যুগে যুগে দাজ্জালের কথা

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল প্রেরিত হয়েছেন তাঁরা সবাই নিজ নিজ উম্মতকে মিথ্যাবাদী কানা দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দাজ্জাল কানাই হবে। আর তোমাদের রব অবশ্যই কানা নন। দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে কাফিরুন। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৯৮)।

দাজ্জালের গঠন আকৃতি

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পেলাম যে আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে ? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম।

হঠাৎ দেখতে পেলাম এক ব্যক্তি স্থূলকায়, লাল বর্ণের কোকড়ানো চুল তার, এক চোখ কানা। চোখটি যেন ফোলা আঙুরের মতো। লোকেরা বলল, এ হলো দাজ্জাল। তার সঙ্গে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হলো ইবনে কাতান, বনি খুজায়ার এক ব্যক্তি। (বুখারি, হাদিস : ৬৬৪৩)।

দাজ্জাল কিয়ামতের আলামত

হুজাইফা ইবনে আসিদ আল গিফারি (রা.) বলেন, একদা আমরা আলোচনা করছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুল (সা.) আমাদের কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন—তোমরা কী নিয়ে আলোচনা করছ? তাঁরা বলেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তখন তিনি বলেন, কিয়ামত কায়েম হবে না—যতক্ষণ না তোমরা ১০টি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধূম্র, দাজ্জাল, পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া, মারইয়াম তনয় ঈসা (আ.)-এর অবতরণ, ইয়াজুজ, মাজুজ ও তিনবার ভূমিধস অর্থাৎ পূর্ব প্রান্তে একটি ভূমিধস, পশ্চিম প্রান্তে একটি ভূমিধস এবং আরব উপদ্বীপে একটি ভূমিধসের কথা উল্লেখ করলেন। এই নিদর্শনগুলোর পর এক আগুন প্রকাশিত হবে ইয়েমেন থেকে এবং মানুষকে তাড়িয়ে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭০২১)।

দাজ্জাল এখন কোথায় ?

ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে দাজ্জালের অবস্থানের কথা বর্ণিত হয়েছে। দীর্ঘ হাদিসের সারাংশ হলো, একদিন নামাজ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) তামিম দারি (রা.)-এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করেন। তারা নৌভ্রমণে বের হয়ে ঘটনাচক্রে একটি দ্বীপে উপনীত হয়েছিল। সেখানে দাজ্জাল ও তার গুপ্তচরের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছিল। হাদিসের শেষাংশে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মনে রেখো, দাজ্জাল শাম কিংবা ইয়েমেনের কোনো সাগরে নেই। সে পূর্বের কোনো এক স্থানে আছে। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭১১৯)।

দাজ্জাল কোথায় আত্মপ্রকাশ করবে

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)আমাদের বলেছেন, দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলীয় কোনো স্থান থেকে বের হবে। স্থানটির নাম হলো খোরাসান। কিছু কওম তার অনুসরণ করবে। তাদের চেহারা হবে স্তরবিশিষ্ট ঢালের মতো। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৭)

দাজ্জালের নিষিদ্ধ এলাকা

আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মক্কা-মদিনা ছাড়া পৃথিবীর সব জনপদে দাজ্জাল বিচরণ করবে। কেননা এই দুই শহরের প্রতিটি রাস্তায় ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পাহারাদারিতে নিয়োজিত থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল মদিনার এক নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করবে। তখন মদিনায় তিনবার ভূকম্পন হবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক ও কাফির মদিনা থেকে বের হয়ে তার নিকট চলে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২৩)

দাজ্জালের আগুন-পানির রহস্য

হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন দাজ্জাল আবির্ভূত হবে তার সঙ্গে পানি ও আগুন থাকবে। কিন্তু মানুষ যাকে পানি দেখবে সেটা হবে দহনশীল আগুন। আর যেটাকে মানুষ আগুন দেখবে সেটা হবে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ সময়কাল পায়, সে যেন দৃশ্যত যাকে আগুন দেখা যাচ্ছে তাতে প্রবেশ করে। কেননা প্রকৃতপক্ষে সেটাই হবে সুপেয় সুমিষ্ট পানি। (মুসলিম, হাদিস : ৭১০৩)।

দাজ্জালের জান্নাত-জাহান্নাম

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের এমন বিষয় বলতে যাচ্ছি, যা কোনো নবী তাঁর উম্মতকে আজ পর্যন্ত বলেননি। শোনো, দাজ্জাল কানা হবে এবং তার সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিকৃতির মতো কিছু বস্তু থাকবে। সে যেটিকে জান্নাত বলবে সেটি (আসলে হবে) জাহান্নাম। দেখো, দাজ্জালের ব্যাপারে আমি তোমাদের সতর্ক করছি। যেমন নূহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭১০৫)।

দাজ্জালের দখলে খাদ্য-পানীয়

মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত বেশি প্রশ্ন করতাম সেরূপ আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বলেন, তার থেকে তোমার কী ক্ষতি হবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে তার সঙ্গে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে! তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে তা অতি তুচ্ছ। (বুখারি, হাদিস : ৬৬৩৭)।

দাজ্জালের ভয়ে মানুষের পলায়ন

উম্মে শারিক (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে পালিয়ে যাবে। এ কথা শুনে উম্মু শারিক (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেদিন আরবের লোকেরা কোথায় থাকবে? জবাবে তিনি বলেন, তখন তারা সংখ্যায় কম হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২৬)।

দাজ্জালের অনুসারী নারী-পুরুষ

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, দাজ্জাল এসে জুরুফের এক অনুর্বর লবণাক্ত ভূমিতে অবতরণ করবে এবং এখানেই সে তার শিবির স্থাপন করবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী তার কাছে চলে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২৪)।

দাজ্জাল ইহুদিদের স্বপ্নপুরুষ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইস্পাহানের ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসারী হবে। তাদের গায়ে থাকবে সবুজ বর্ণের চাদর বা জুব্বা। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২৫)।

দাজ্জালের রাজত্বের মেয়াদ

নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে ? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ৪০ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান। দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনগুলোর মতো হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১০৬)।

দাজ্জালের নিহত হওয়ার স্থান

মুজাম্মা ইবনে জারিয়া আনসারি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) দাজ্জালকে লুদ-এর ফটকে হত্যা করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪৪)।

দাজ্জাল থেকে বাঁচার আমল

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এই দোয়া করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবিন্নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল। (বুখারি, হাদিস : ১৩৭৭)।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!