জীবনের আসল সুখ-শান্তি সম্পর্কে কোরআনের বর্ণনা

  • আপডেট সময় রবিবার, মার্চ ১০, ২০২৪
  • 91 পাঠক

মাইমুনা আক্তার । ১০ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

মানুষ সাধারণত ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভবকে সফলতার মাপকাঠি মনে করে। তাই কারো ঐশ্বর্যের মহড়া দেখলে মানুষ তাদেরই সফল ভাবে। কেউ কেউ হীনম্মন্যতা থেকে নিজেকে আল্লাহর অপ্রিয়ও ভাবতে শুরু করে। তারা ভাবতে থাকে, আল্লাহ মনে হয় সম্পদশালীদেরই বেশি ভালোবাসেন।

অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ঈমান ও নেক আমল ছাড়া শুধুমাত্র ধন-সম্পদ প্রকৃত সফলতা নয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বস্তু নয়, যা তোমাদের আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই তাদের আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা (জান্নাতের) সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।  (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৭)।

অর্থাৎ, ঈমান ও নেক আমলহীন ধন-সম্পদ আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্যের প্রমাণ নয়। বরং যাদের ঈমান আছে, যারা নেক আমল করে মহান আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন।

কেউ যদি তার ধন-সম্পদকে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আয় করে এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যয় করে, তাহলে তার সেই সম্পদকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সোপান বলা যায়। অন্যথায় সম্পদ মানুষের জন্য ফিতনাস্বরূপ।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর জেনে রাখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট আছে মহা পুরস্কার। (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৮)।

মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তাকওয়া, যার মাধ্যমে তারা আখিরাতের মুক্তি লাভ করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর অবশ্যই যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই উত্তম ; তবু কি তোমরা বোঝ না ? (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০৯)।

দুনিয়ার সব সম্পদ দিয়েও মানুষ তার অনেক কষ্ট দূর করতে পারে না, দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারে না। হায়াত শেষ হয়ে গেলে সব সম্পদ খরচ করেও এক মুহূর্ত বেশি বাঁচতে পারে না। কিন্তু যারা আখিরাত পেয়ে গেছে, তার কাছে অপূর্ণতা বলে কিছু থাকবে না।

দুনিয়ায় ধন-সম্পদ পেয়ে যদি কেউ তার সঠিক ব্যবহার না করে, আল্লাহকে ভুলে যায়, তাহলে তা পরকালীন শাস্তির কারণ হবে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছে। বলা হবে, তোমরা (ফেরেশতারা) একে জাহান্নামে একটি চুবান দাও। অতএব তাকে জাহান্নামে একটি চুবান দেয়া হবে।

অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে অমুক ! তুমি কি কখনো সুখের ছোঁয়া পেয়েছ ? সে বলবে, না, আমি কখনো সুখের ছোঁয়া পাইনি। অতঃপর (কিয়ামতের দিন) ঈমানদারদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে জীবন কাটিয়েছে। বলা হবে, একে একটু জান্নাত দেখাও।

অতঃপর তাকে জান্নাত দেখানো হবে। এরপর তাকে বলা হবে, হে অমুক ! তোমাকে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ স্পর্শ করেছে ? সে বলবে, আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২১)।

এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের সর্বদা আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এবং বলেছেন আখিরাতের সুখই প্রকৃত সুখ। আনাস (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন।

আনসার ও মুহাজিরগণ একদিন ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করেছিলেন। তাঁদের কোনো গোলাম বা ক্রীতদাস ছিল না যে তাঁরা তাদেরকে এ কাজে নিয়োগ করবেন। ঠিক এমনি সময়ে নবী (সা.) তাঁদের মাঝে উপস্থিত হলেন। তাঁদের অনাহারক্লিষ্টতা ও কষ্ট দেখে তিনি বলেন, হে আল্লাহ ! আখিরাতের সুখ শান্তিই প্রকৃত সুখ শান্তি। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও।

সাহাবিগণ এর জবাবে বলেন, ‘আমরা সেসব লোক, যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, যত দিন আমরা জীবিত থাকি আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামের জন্য।’ (বুখারি, হাদিস : ৪০৯৯)।

অর্থাৎ আখিরাতের প্রকৃত সুখ-শান্তি পেতে তাঁরা সারা জীবন রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থেকে যেকোনো কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ সবাইকে আখিরাতের প্রকৃত সফলতা দান করুন। পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনকে আমলময় ও সুখময় করুন। আমিন।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!