সংকটে ধুঁকছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত

  • আপডেট সময় রবিবার, মার্চ ১৭, ২০২৪
  • 54 পাঠক

———————————————

এডিবির প্রতিবেদন

———————————————

দিশারী ডেস্ক। ১৭ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

ভাল নেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বাংলাদেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক, সভা, সমাবেশ, সমালোচনা ও আলোচনা হয়েছে। তবে এ খাতে গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। অপর্যাপ্ত হাসপাতাল শয্যা, ডাক্তার ও নার্সের স্বল্পতা, দক্ষ ল্যাব টেকনিশিয়ান সংকট সব মিলিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাত রীতিমতো ধুঁকছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

এডিবির ‘হোয়াট হ্যাজ কভিড-১৯ টট আস অ্যাবাউট এশিয়া’স হেলথ ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতাল শয্যার সংখ্যা গড়ে একটি। আবার প্রতি হাজার মানুষের জন্য গড়ে ডাক্তার রয়েছেন একজন। তবে নার্স রয়েছেন একজনেরও কম। আর প্রতি হাজার মানুষের জন্য ল্যাব টেকনিশিয়ান গড়ে দুজনেরও কম।

প্রতিবেদনটিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৪টি দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো-সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি হাজার রোগীর জন্য গড়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাক্তার রয়েছেন জর্জিয়ায়; যার সংখ্যা পাঁচজন।

এছাড়া গড়ে চারজনের বেশি ডাক্তার রয়েছেন আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া ও কাজাখস্তানে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। দেশটিতে প্রতি হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার রয়েছেন তিনজনের বেশি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানও রয়েছে বাংলাদেশের ওপরে।

বাংলাদেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য গড়ে একজন ডাক্তার রয়েছেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন জানান, বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোয় স্নাতক ডিগ্রিধারী ডাক্তার আছেন ২৯ হাজার ৫৬১ জন। স্নাতক ডিগ্রিধারী নার্সের সংখ্যা ছয় হাজার ৬৫০ জন, যাদের মধ্যে বিএসসি ইন নার্সিং তিন হাজার ৯০৪ জন, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এক হাজার ৫৯৭ জন এবং বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এক হাজার ১৪৯ জন।

এছাড়া স্নাতক ফার্মাসিস্ট রয়েছেন পাঁচজন।

এদিকে গত বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর (বিবিএস) ‘জনশুমারি ২০২২’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে ডাক্তার ও ডেন্টিস্টের সংখ্যা সম্মিলিতভাবে মাত্র এক লাখ ৭৯ হাজার ১৬০ জন। আর দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। অর্থাৎ প্রতি এক হাজারের জন্য ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন সম্মিলিতভাবে এক দশমিক শূন্য পাঁচজন। দেশে নার্স বা মিডওয়াইফ রয়েছে ৮৩ হাজার ৫০০। অর্থাৎ প্রতি হাজার মানুষের জন্য নার্স বা মিডওয়াইফ শূন্য দশমিক ৪৯ জন।

এডিবির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রতি হাজার রোগীর জন্য গড়ে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নার্স বা মিডওয়াইফ রয়েছে উজবেকিস্তান ও আজারবাইজানে। দেশ দুটি এ সংখ্যা ১২০ জন। কাজাখস্তানে এ সংখ্যা ১১০, তুর্কমিনিস্তান ও আর্মেনিয়ায় ৮৫, সিঙ্গাপুরে ৮০, ব্রুনেই ও থাইল্যান্ডে ৭৫।

এছাড়া প্রতি হাজার রোগীর জন্য গড়ে ৬০ জন বা তার বেশি নার্স রয়েছে মালয়েশিয়া, নিও দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, পালাউ ও থাইল্যান্ডে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর গড় এক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৮। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম গড় নার্সের সংখ্যা শুধু আফগানিস্তানের।

মেডিকেল ল্যাব টেকনিশিয়ানও বাংলাদেশে তুলনামূলক অনেক কম। এক্ষেত্রে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর গড় প্রতি লাখে ২৭ দশমিক ৫ জন। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২০-র কম। অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য গড়ে দুজন করেও মেডিকেল ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে প্রতি ১০ হাজার জনের বিপরীতে ১০ জনের বেশি মেডিকেল ল্যাব টেকনিশিয়ান রয়েছে।

এছাড়া তাইওয়ানে ৭০ জনের বেশি, চীন ও ব্রুনেইয়ে ৬০ জনের বেশি এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০ জন করে রয়েছেন ল্যাব টেকনিশিয়ান।

এদিকে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্যও গড়ে একটি করে হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। আর প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতাল শয্যার সংখ্যা গড়ে একটি। প্রতি লাখ মানুষের জন্য গড়ে সবচেয়ে বেশি হাসপাতাল রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায় ; যার সংখ্যা ১৫টি। দেশটিতে প্রতি হাজার মানুষের জন্য হাসপাতাল শয্যা গড়ে আটটির বেশি। গড়ে ছয়টির বেশি হাসপাতাল শয্যা রয়েছেÑমঙ্গোলিয়া, আজারবাইজান, তাইওয়ান ও কাজাখস্তানে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর গড় এক্ষেত্রে প্রতি হাজারে দুই দশমিক ৯০।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন জানান, দেশে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৬০টি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৯৯ হাজার ৯৭৫টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে হাসপাতালে শয্যা রয়েছে মোট এক লাখ ৭১ হাজার ৬৭৫টি। এ হিসাবে প্রতি ৯৯০ জন মানুষের বিপরীতে একটি শয্যা রয়েছে। আর দেশে প্রতি ৫০ জন মানুষের বিপরীতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা শূন্য দশমিক ০২১টি (০.০২১) জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আনুষ্ঠানিক খাতের সরকারি চাকরিজীবী ও পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে অনানুষ্ঠানিক খাতের জনগোষ্ঠীকেও এ বিমার আওতায় আনা হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!