কার ইন্ধনে কেএনএফ’র এমন উগ্রতা ?

  • আপডেট সময় সোমবার, এপ্রিল ৮, ২০২৪
  • 67 পাঠক

———————————————————————————
মনিপুর পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র কেএনএফের হাতে, ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
আরাকান আর্মির সঙ্গেও রয়েছে ঘনিষ্ঠতা
ধনী দেশগুলো থেকে পাচ্ছে অর্থ

———————————————————————————

দিশারী ডেস্ক। ৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আর মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। সন্ত্রাসীরা তাদের সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছে মাত্র। তবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধূলিসাৎ করে দেবে। অস্ত্র ও পোশাকসহ তারা দেশে ঢুকবে, আর আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে, তা কাম্য নয়। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবো। কোনোক্রমেই আইন ভঙ্গ করতে দেবো না তাদের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা করা দরকার, সবই করবো।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কেএনএফ এর মদদের সাথে কয়েকটি দেশ নেপথ্যে কাজ করছে। এদের কার্যক্রম গোয়েন্দারা মনিটরিং করছে। অনেকে যার যার স্বার্থ ও মতলব হাসিল করার জন্য এদের ইন্ধন যোগাচ্ছে। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। পার্বত্যাঞ্চলে সাড়াশি অভিযান চলছে। অন্যান্য ৬১ জেলার মতো এখানেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

আশেপাশের দেশগুলোর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মদদে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। ভারতের মনিপুরিতে পুলিশের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খোয়া যায়। সেই অস্ত্র কুকি চিনের হাতে এসেছে বলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধারনা করছে। মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গেও রয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠতা।

এছাড়া কয়েকটি দেশ অর্থ ও অস্ত্র দিচ্ছে-এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কুকিচিনের সাম্প্রতিক ব্যাংকে হামলার মূলে রয়েছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ বন্ধ করা। কারণ সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে পুরো পার্বত্যাঞ্চল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চলে আসবে। সীমান্তে সড়ক না থাকায় বর্তমানে কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে সেখানে পৌঁছাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। কোন কোন এলাকায় যেতে এক-দুই দিন লেগে যায়। তবে ওই সব এলাকার কুকিচিনের খুবই পরিচিত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদেরও যোগাযোগ আছে। ইতোমধ্যে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা অনেক কিছু সহযোগিতা পাচ্ছে।

পাহাড়ে অন্যান্য সন্ত্রাসীদের থেকে কেএনএফ সুপ্রশিক্ষত। তবে তারা সংখ্যায় কম। সরকারের কাছে তারা তিনটি দাবি করেছে। এগুলো হলো, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ অঞ্চল গঠন। ওই এলাকায় কুকি-চিনের নেতৃত্বে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল এবং ভারত ও মিয়ানমারে চলে যাওয়া কুকি-চিন জনগোষ্ঠীকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা এবং সরকারি চাকরি দেয়া। শান্তি কমিটির কাছে এসব প্রস্তাব তারা দিয়েছে।

তারা এমন দাবি করেছে, যাতে আলোচনা সফল না হয়। বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে মনে করে। তবে কেএনএফ তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরমে দাবি করেছে, তারা বাংলাদেশের কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়।

তারা বলছে, তারা ‘সুবিধা বঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্য সশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাসহ একটি ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি করছে, স্বাধীনতার ঘোষণা তারা দেয়নি।’

ব্যাংক লুট করতে গিয়ে সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে কেএনএফ। তাদের হেফাজতে ছিলেন নিজাম উদ্দিন। এ সময় তিনি কেএনএফ আস্থানায় তাদের কথোপোকথন শোনে। অনেকের তিনি মনিপুরের ভাষার মতো কথা বলতে শুনছেন। তার মানে ভারতের মনিপুরের মানুষ এখানে আছে।

এছাড়া মিয়ানমারের মানুষের যাতায়াত আছে পার্বত্যাঞ্চলে কেএনএফ এর আস্থানায়। আরাকানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ কারণে সেখান থেকে নিয়মিত অস্ত্র পাচ্ছে। এখন তারা পার্বত্যাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ওঠেপড়ে লেগেছে। এটা কেন করছে তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে গিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারেন, কেএনএফ এর মূল উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত সড়ক বন্ধ করা। এ কারণে হঠাৎ করে এভাবে তারা মামলা করছে।

সীমান্ত দিয়ে সড়ক হলে ২৪ ঘণ্টা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকবে পুরো পার্বত্যাঞ্চলে, পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। তখন কেএনএফসহ কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পার্বত্যাঞ্চলে টিকতে পারবে না। এ জন্য কেএনএফকে মূল ফোকাসে রেখে নেপথ্যে পার্বত্যাঞ্চলের আরও চারটি সংগঠন কলকাটি নাড়ছে। তাদের মধ্যে অন্য বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও সীমান্ত সড়ক বন্ধ করতে তারা এক। এমন তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন।

সীমান্ত সড়ক যাতে করতে না পারে, সেজন্য নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছে। এটা একটা বড় ষড়যন্ত্র। তবে সীমান্ত সড়ক হলে, সরকারের বড় সফলতা হবে। পুরো পার্বত্যাঞ্চল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে আসবে। বর্তমানে সীমান্তে বেশিরভাগ এলাকা অরক্ষিত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে না।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেএনএফ এর বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা চোরাগুপ্তা হামলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রাস্তার পাশে বোমা সদৃশ বস্তু পুতে রাখে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেয়ার জন্য।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেএনএফ এর বিরুদ্ধে যৌথ সাড়াশি অভিযান চলছে। তাদের নির্মূল না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!