সামরিক সক্ষমতায় ইসরায়েলের থেকে তিন ধাপ এগিয়ে ইরান

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
  • 69 পাঠক

দিশারী ডেস্ক । ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যমতে, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইসরায়েলের থেকে তিন ধাপ এগিয়ে আছে ইরান। তালিকায় থাকা ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম, অন্যদিকে ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।

গাজায় হামলা শুরুর পর বিভিন্ন ইস্যুতে ইতোমধ্যে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। অনেক সমর বিশ্লেষক দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। আর সত্যিই যুদ্ধ হয়- তাহলে এটি আধুনিক সমরাস্ত্রের এক ভয়াবহ প্রদর্শনী হয়ে ওঠতে পারে। কারণ দুই দেশের কাছেই রয়েছে শক্তিশালী অস্ত্রের ভাণ্ডার।

দুই দেশের জনসংখ্যার তুলনা

ইরানের মোট জনসংখ্যা ৮ কোটি ৭৫ লাখ, এর মধ্যে সামরিক বাহিনীকে সেবা দিতে সক্ষম জনসংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। অন্যদিকে ইসরায়েলের জন্যসংখ্যা মাত্র ৯০ লাখ এবং সামরিক সেবা দিতে সক্ষম জনসংখ্যা ৩১ লাখ।

সেনা সংখ্যায় এগিয়ে ইরান

ইরানের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সেনা সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার, ইসরায়েলের নিয়মিত সামরিক বাহিনীতে সেনা রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। তবে ৪ লাখ ৬৫ হাজার সেনা নিয়ে রিজার্ভ ফোর্সে সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। বিপরীতে ইরানের রিজার্ভ সেনা সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার। এ ছাড়া ইরানের রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার সেনার বড় আধাসামরিক বাহিনী, সেখানে ইসরায়েলের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৩৫ হাজার।

সামরিক বাজেটে এগিয়ে ইসরায়েল

আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন সামরিক বরাদ্দ। বাজেটের দিক থেকে ইরানের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে ইসরায়েল। সবশেষ অর্থবছরে ইরানের সামরিক বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৯৯৫ কোটি মার্কিন ডলার, অন্যদিকে ইসরায়েলের বাজেট ছিল ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বৈদেশিক রিজার্ভেও এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল।

বিমান বাহিনীতে এগিয়ে ইসরায়েল

আধুনিক যুদ্ধে বিমান সেনাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারাই সাধারণত প্রথম আক্রমণ পরিচালনা করে। আর বিমান বাহিনীর দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। তাদের বিমান বাহিনীর এয়ারক্র্যাফটের সংখ্যা ৬১২টি। এর মধ্যে ২৪১টি যুদ্ধবিমান।

ইসরায়েলের বিমানবহরে রয়েছে পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ ও চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া রয়েছে অ্যাপাচির মতো অ্যাটাক হেলিকপ্টার। অন্যদিকে ইরানের বিমান বাহিনী ইসরায়েলের তুলনায় খুবই দুর্বল। তাদের বহরে পঞ্চম প্রজন্মের কোনো যুদ্ধবিমানই নেই। দেশটির বিমান বাহিনীর সার্ভিসে থাকা সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমানটি হলো রুশ নির্মিত মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান।

স্থলবাহিনীর সমরাস্ত্রে এগিয়ে ইরান

স্থলযুদ্ধে ট্যাংক কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের অগ্রভাগেই থাকে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ট্যাংক রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬টি। ইসরায়েলের কাছে ট্যাংক রয়েছে ১ হাজার ৩৭০টি। ইরানের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৬৫ হাজারের বেশি এবং ইসরায়েলের সাঁজোয়া যান ৪৩ হাজারের বেশি।

এ ছাড়া ইরানের কাছে থাকা সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি কামানের সংখ্যা ৫৮০টি, টাওয়েড আর্টিলারি কামান রয়েছে ২ হাজার ৫০টি ও মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৭৭৫টি। অন্যদিকে ইসরায়েলের কাছে রয়েছে ৬৫০টি সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি কামান। টাওয়েড আর্টিলারি কামান রয়েছে ৩০০টি ও মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ১৫০টি।

নৌ সরঞ্জামে এগিয়ে ইরান

ইরানের নৌবহরে মোট সমুদ্রযান রয়েছে ১০১টি। ইসরায়েলের রয়েছে ৬৭টি। ইরানের সাবমেরিন রয়েছে ১৯টি এবং ইসরায়েলের রয়েছে মাত্র ৫টি। ইরানের ফ্রিগেট রয়েছে ৭টি। ইসরায়েলের কাছে কোনো ফ্রিগ্রেট নেই। ইরানের কাছে কর্ভেট রয়েছে ৩টি, বিপরীতে ইসরায়েলের কাছে রয়েছে ৭টি কর্ভেট। ইরানের একটি মাইন ওয়্যারফেয়ার জাহাজও আছে, তবে ইসরায়েলের কাছে এমন কোনো জাহাজ নেই। এ ছাড়া দুই দেশের কারও কাছেই কোনো বিমানবাহী রণতরী নেই।

দুই দেশের কৌশলগত অস্ত্র

ইসরায়েলের কাছে পরমাণু বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে তেলআবিব কখনোই তা স্বীকার করে না। বিপরীতে ইরানের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। কিন্তু ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, তেহরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাস রয়েছে। তবে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও ধারণা করা হয়- দেশটি কামিকাজি ড্রোন ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল মজুত গড়ে তুলেছে।

দুই দেশের মিত্ররা

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা প্রায় সব দেশেই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে থাকে। এই দেশগুলোই মূলত ইসরায়েলে সমরাস্ত্র সরবরাহ করে। এ ছাড়া জর্ডান, আরব আমিরাত, তুরস্কের মতো মুসলিম দেশের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তেলআবিবের। বিপরীতে ইরানকে সমর্থন দিয়ে থাকে রাশিয়া ও চীন।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তারা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কৌশলগত কিছু অস্ত্র এই দুই দেশ থেকেও কিনে থাকে তেহরান। এ ছাড়া ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে তাদের সশস্ত্র মিত্র গোষ্ঠী রয়েছে।

সূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!