ইউপি চেয়ারম্যানের দখলে সহস্রাধিক একর

  • আপডেট সময় বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
  • 130 পাঠক

————————————————————————————————

নোয়াখালীর চর এলাহির সরকারী ভূমি

————————————————————————————————-

দিশারী ডেস্ক। ১৭ এপ্রিল,২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

এক সময় এ ভূমিতে ছিল কারো না কারো বসতি। কালগর্ভে সেটুকু কিছুকাল ছিল খরস্রোতা মেঘনায়। বর্তমানে সে ভূমির মালিক পুরোটাই সমাজের দখলবাজ,শক্তি আর ক্ষমতার দৌরাত্ম্য শ্রেণীরাই। যাদের জায়গা, তারা আজো নীড়হারা পাখির ন্যায়।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহির গাংচিল। মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠছে চর। সরকার খোঁজখবর নেয়ার আগেই দখলদাররা হাজির। জেগে ওঠা চরসহ নদী থেকে দৈনন্দিন চর জাগার আনাগোনার অংশ বিশেষও ওইসব দখলদারিত্বের দখল হয়ে যায় সহজে। কুটকৌশলে।

সরেজমিনে যে দিকে চোখ যাই, সবই এক ব্যক্তির দখলে। কমপক্ষে সহস্রাধিক একর সরকারী ভূমি দখলে নিয়েছেন তিনি। একজন ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন কোম্পানী। কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।

চরএলাহি মৌজায় মেঘনার কূলঘেঁষে জেগে ওঠা চরই যেন তার হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারো সাহস নেই। ভাষা স্তব্ধ। তাদের ভাষায়, রাজনীতিক, সাংবাদিক, প্রশাসন সবাই তার কেনা গেলাম হয়ে যায়। নচেৎ, প্রকাশ্য দিবালোকে সহস্রাধিক একর সরকারী ভূমি কোনভাঊেন দখলে নেয়া সম্ভব হয় কিভাবে! সরেজমিনে কামাল কোম্পানীর ঘেরাওয়ে নেয়া পুরো এলাকাটি ঘুরতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময়ও সম্ভব হয়নি। তার চৌহদ্দিতে ৭/৮ টি ট্রাক ও ১০/১২ টি মাটি কাটার মেশিন এখনো দিনেরাতে মাটি বহন ও কাটতে দেখা যায়। বেশ কিছু মাটি কেটে নিয়েছেন নিজের মকবুল চৌধুরীর হাটের ইটভাটায়।

স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কামাল কোম্পানীর চৌহদ্দিতে ইতোপূর্বে ৫০/৬০ টি হতদরিদ্র্য পরিবার বসবাস করতো। নিশ্চিত ভূমিহীন পরিবার। নদীগর্ভে সব হারিয়ে এখানে আশ্রয়নিবাসের স্বপ্ন বুনেছিলেন তারা। কিন্তু রাক্ষুসে মেঘনার চেয়েও ভয়ঙ্কর রাক্ষুসের ছোবলে উন্মত্ত নদীর ন্যায় একদিনেই ঘর, সংসারও বাড়ি ফের যেন তছনছ হয়ে যায়। বর্তমানে সেসব পরিবারগুলো চরএলাহির বেড়ির আশেপাশের জায়গায় কোনরকম দিনাতিবাহিত করছে।

বসতিহারা একটি পরিবার নাম প্রকাশ নার শর্তে জানান, গত কিছুদিনের মধ্যে কামাল কোম্পানী ওসব পরিবারগুলোকে মধ্যভাগে রেখে ঠান্ডামাথায় পুরো পরিবারগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ চারপাশই ঘেরাও করে নেয়। একপর্যায়ে, ওই পরিবারগুলো চারদিকের চলাফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিরুপায় হয়ে অসহায় আর অভিভাবকহারা এ পরিবারগুলো বসত গুটিয়ে নেয়। সরকারী ভূমি ঘেরাওকালে ওই ভূমির মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া জাল ছেঁড়া নদীও কামাল কোম্পানীর দখলের ঘেরাওয়ের টোপে প্রাণ হারায়। যেন চিরতরে নি:শেষ হয়ে গেলো জালছেঁড়া নদীর বাদবাকী জীবন।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের প্রকাশ্য চোখের সামনে এভাবে চরএলাহির সহস্রাধিক একর সরকারী ভূমি কামালের দখলে গেলেও চেয়ারম্যান এসব নিয়ে কোন ধরনের বাদ প্রতিবাদে নেই। তবে অনেকে বলেছেন, তিনি নাকি ওই কোম্পানীর কাছ থেকে সুবিধাও নিয়েছেন। যেটা দু’জনের মধ্যেই বোঝাশোনা বলেই প্রমাণযোগ্যও নই।

অবশ্য চেয়ারম্যান বলেছেন, এসব বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। সরকারী জায়গার মালিক তিনি নন বলেও জানান।

স্থানীয়রা আরো জানান, কামাল এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তিনি যাই বলেন, তাই অনেকের কাছে ধর্তব্য হয়ে যায়। তার আধিপত্যে স্থানীয়রাও অনেকে অসহায়। কামাল রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের খুশি করে চলেন। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, তিনি দলীয় কোন সভা, সমাবেশে হাজার টাকা খরচ করে লাখ, লাখ টাকা খরচ করে কোটি কোটি টাকার সুবিধাি ভাগিয়ে নেন।

তিনি প্রায় সময় সরকারের মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা, সাক্ষাৎসহ নানা ধরনের সখ্যতার ফিরিস্তির বয়ান দিয়ে বেড়ান। যা শুনে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। এ কারণে অনেকে মনে করছেন, তার দখলদারিত্ব নিয়ে কোন ধরনের উচ্চবাচ্চ্য করেও লাভ নেই! তাছাড়া তিনি কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবেও কম প্রভাবে প্রভাবিত নই।

এসব বিষয়ে জানতে কামাল উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করলেও না ধরায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেছেন, সরকারের হাজার হাজার একর সরকারী খাসভূমি থাকার পরেও তাদের বসতির জায়গা নেই। কেননা এ জায়গাগুলো দেশের রাঘববোয়াল নামের মানুষগুলো কথিত প্রকল্পের নামে লুটেপুটে খায়। তারা দাবি করছেন, নদী গর্ভ থেকে জেগে ওঠা এসব ভূমি জেলার উপকূলীয় ভূমিহীন পরিবারগুলোর অন্ন, বাসস্থানের সংস্থানের লক্ষ্যে যেন প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!