ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, মে ৩০, ২০২৪
  • 96 পাঠক

মুফতি আবদুল্লাহ নুর। ২৯ মে, ২০২৪

যেসব কাজের ভিত্তি শরিয়তে পাওয়া যায় না, অথচ প্রথা ও রেওয়াজের ওপর ভিত্তি করে করা হয় তাকে রুসুম বা কুসংস্কার বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে কুসংস্কার পরিহার করা আবশ্যক। কেননা এটি সমাজ ও সভ্যতার জন্য মারাত্মক ব্যাধি। কুসংস্কার মানুষের জীবন কঠিন করে তোলে এবং সমাজ থেকে দ্বিন ও সুন্নাহর চর্চা কমিয়ে দেয়।

এখানে বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

১. কবর পাকা করা : কবর পাকা করা, তার ওপর চাঁদোয়া টানানো এবং গিলাফ লাগানো মাকরুহ। একইভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানত করাও গুনাহর কাজ। আল্লামা শামি বলেন, ‘কবরের ওপর চাঁদোয়া টানানো মাকরুহ তাহরিমি।’ (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) কবর পাকা করতে, কবরের ওপর সৌধ নির্মাণ করতে এবং কবরের ওপর বসতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা-১৪৮)

২. শোকে বিলাপ করা : কারো মৃত্যুর পর নারী-পুরুষ একত্র হয়ে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করা এবং বুক চাপড়ে, কাপড় ছিঁড়ে শোক প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। এটা জাহেলি যুগের রীতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাথার চুল ছেঁড়ে, উচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি করে এবং জামা-কাপড় ছেঁড়ে আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা-১৫০)

৩. পোশাক-পরিচ্ছদে অসংযম : অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক পরা মুসলমানের জন্য হারাম। নারীর জন্য পুরুষের এবং পুরুষের জন্য নারীর পোশাক পরা হারাম। পুরুষের জন্য স্বর্ণালংকার পরা হারাম। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য হাফপ্যান্ট পরা হারাম। ইচ্ছাকৃতভাবে টাখনুর নিচে কাপড় পরা পুরুষের জন্য হারাম। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) পুরুষের পোশাক অনুকরণকারী নারী এবং নারীর পোশাক অনুকরণকারী পুরুষের প্রতি অভিশম্পাত করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৫৬৬; ইসলাহুর রুসুম, পৃষ্ঠা-২৩)

৪. পরচুলা ব্যবহার : চুলের আধিক্য দেখাতে পরচুলা লাগানো কুসংস্কার। নবী করিম (সা.) সেই সব নারীকে অভিশম্পাত করেছেন, যারা পরচুলা লাগায় এবং অপরকে তা লাগিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারি, পোশাক অধ্যায়)

৫. উল্কি আঁকানো : শরীরে উল্কি উত্কীর্ণ করা, ভ্রু উপড়ানো এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁতের মধ্যে ফাঁক করাও নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, সৌন্দর্যের জন্য উল্কি আঁকানো, উল্কি গ্রহণকারী নারী, ভ্রু উপড়ানো নারী এবং দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারী—যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন করে তাদের ওপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন। (সহিহ বুখারি, পোশাক অধ্যায়)

৬. শবেবরাতের হালুয়া-রুটি : শবেবরাতে হালুয়া-রুটি এবং আশুরার সময় খিচুড়ি ও শরবতের ব্যবস্থা করাকে আবশ্যক মনে করা কুসংস্কার। শবেবরাতে বাড়িঘর ও মসজিদে আলোকসজ্জা করা, পটকা ফোটানো এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুসংস্কার। কেননা এতে নিজের ইবাদত নষ্ট হয়, অন্যের ইবাদতের পরিবেশও নষ্ট হয়।

৭. প্রাণীর ছবি টাঙানো : ঘরে বা অফিসে কোনো প্রাণীর ছবি টাঙানো এবং বিনা প্রয়োজনে কুকুর পোশা কুপ্রথার শামিল। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা-৩৮৫)

৮. বাঁ হাতে খাওয়া : বাঁ হাতে খাওয়া, বিনা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে খাওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়ার পর কিছু খাবার অবশিষ্ট রাখা কুসংস্কার। রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ তোমরা কেউ বাঁ হাতে পানাহার করবে না। কেননা শয়তান বাঁ হাতে পানাহার করে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা-৩৬৩)

৯. সালাম না দিয়ে হাত ওঠানো : মুসলমানদের পরস্পরের সাক্ষাৎ হলে সালাম দেয়া সুন্নাত। কিন্তু মুখে সালাম না দিয়ে শুধু হাত দ্বারা ইঙ্গিত করা কুসংস্কার। একইভাবে সালাম না দিয়ে আদাব বা গুড মর্নিং বলাও কুসংস্কার।

১০. খতনার অনুষ্ঠান করা : খতনার অনুষ্ঠান করা এবং তাতে মানুষ একত্র করা সুন্নাতের পরিপন্থী। এক ব্যক্তি উসমান ইবনে আবুল আস (রা.)-কে খতনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। (ইসলাহুর রুসুম, পৃষ্ঠা-২৩)

আল্লাহ সবাইকে কুসংস্কার পরিহার করার তাওফিক দিন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!