মিরাজ রহমান । ১২ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
সন্তান মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামত। সন্তান জন্মের পর পশু জবাই দিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা হয়। এটাকে আকিকা বলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নাতিদের আকিকা করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৯৬১)
অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ পশু যবাই করো) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)
সন্তান ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। তবে যদি কেউ কারণবশত সপ্তম দিন না করতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। সন্তানের বাবা বা তার অনুপস্থিতিতে অন্য যে থাকেন, তিনিই আকিকা করবেন। উম্মে কুরজ (রা.) বলেন, ‘ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৮৩৪)
মালেকি ও শাফি মাজহাবের মতে, কোরবানির পশুর সঙ্গে আকিকা দেয়া জায়েজ নয়। তারা বলেন, আকিকা ও কোরবানি উভয়টি সত্তাগতভাবে উদ্দিষ্ট। দুটির কারণও আলাদা। এ কারণে একটি অপরটির পক্ষ থেকে জায়েজ হবে না। যেভাবে ফিদিয়ার দম (পশু) তামাত্তু’র দমের (পশু) স্থলাভিষিক্ত হয় না। হাইতামি বলেন, আমাদের মাজহাবের আলেমদের কথা হলো, যদি একটি ভেড়া দিয়ে কোরবানি ও আকিকার নিয়ত করা হয়, তা হলে দুইটার কোনোটায় আদায় হবে না। যেহেতু এ দুটির প্রত্যেকটি উদ্দিষ্ট সুন্নত।’ (তুহফাতুল মুহতাজ শারহুল মিনহাজ, ৯/৩৭১)
হানাফি মাজহাব ও ইমাম আহমদের একটি মত অনুযায়ী, কোরবানির সঙ্গে আকিকা করা বৈধ। এই ফতোয়াই আমাদের দেশে প্রচলিত। তারা বলেন, পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা উদ্দেশ্য। তাই একটি অপরটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমনিভাবে তাহিইয়াতুল মসজিদ (মসিজদে প্রবেশের নামাজ) ফরজ নামাজের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর, ৪/১১৬)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক।
Leave a Reply