যেসব অভ্যাস মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে

  • আপডেট সময় রবিবার, জুন ৩০, ২০২৪
  • 85 পাঠক

মাইমুনা আক্তার। ২৯ জুন, ২০২৪ 

কিছু অভ্যাস এমন আছে, যেগুলো মানুষকে প্রকৃত মুমিন হতে বাধাগ্রস্ত করে। পাশাপাশি এগুলোর কারণে মানুষের সাজানো বাগান ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ হঠাৎ করে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যায়। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে সে অভ্যাসগুলো তুলে ধরা হলো—

সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ :

লোভ-লালসা মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে, আর তা মানুষকে আল্লাহর বিধান অমান্য করে পাপাচারে মত্ত করে তোলে। ফলে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)

অপরিশুদ্ধ হৃদয় :

মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অপরিশুদ্ধ হৃদয়। এর লালসা ও চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। দুনিয়া ও আসমানবাসীর কাছে নিজেকে ঘৃণিত করে তোলে। কারণ অপরিশুদ্ধ হৃদয়ের কাজ হলো মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করা।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ আর আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, কেননা নিশ্চয় মানুষের নফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)

অহংকারী সবার কাছে নিন্দিত :

অহংকার, দাম্ভিকতা মানুষের ব্যক্তিত্বকে শেষ করে দেয়। তাকে সর্বমহলে নিন্দিত করে তোলে। মানুষের কাজকে ঘৃণিত করে তোলে। মহান আল্লাহও দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা : নাহল, আয়াত : ২৩)

গোপন পাপের কঠিন শাস্তি :

এটি নীরবে মানুষকে শেষ করে দেয়। এর পরিণাম ভয়াবহ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)

কৃপণতা ধ্বংসের কারণ :

অনেকে ধারণা করে একটু কৃপণ না হলে জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়। ধনসম্পদ আগলে রাখতে হলে কৃপণ হওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ইসলাম বলছে, কৃপণতা মানুষের বড় শত্রু। এটি মানুষের ধ্বংসের কারণ।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) ভাষণ দিলেন এবং বলেন, ‘ তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, যখন তারা তাই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)

দুনিয়ার প্রতি আসক্তি :

দুনিয়ার প্রতি আসক্তিও মানুষের বড় শত্রু। যারা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে, মহান আল্লাহ তাদের মন থেকে প্রশান্তি তুলে নেবেন। তাদের জীবন থেকে বরকত তুলে নেবেন। ফলে সে দুনিয়া আখিরাত দুটিই হারাবে।

আবান বিন উসমান, থেকে বর্ণিত, জায়দ বিন সাবিত (রা.) দুপুরের সময় মারওয়ানের কাছ থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আমাদের শ্রুত কিছু হাদিস শোনার জন্য মারওআন আমাদের ডেকেছেন।

আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসঙ্গী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকু লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখিরাত, আল্লাহ তার সব কিছু সুষ্ঠু করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে এই অভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!