ঘুষ সমাজের জন্য অভিশাপ

  • আপডেট সময় বুধবার, মে ১৯, ২০২১
  • 566 পাঠক

——————-

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা   

——————–
সাধারণ মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত  এবং দেশকে পেছনে ফেলে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। আমরা যত দিন এর শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারব না, তত দিন আমাদের এর কুফল ভোগ করতেই হবে। নীতি ও নৈতিকতার পাখায় ভর করে (ঈমানের সঙ্গে) দুনিয়ার হায়াতকে পাড়ি না দিতে পারলে, অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের চাপে আমাদের জাহান্নামের অতল গর্ভে নিপতিত হতে হবে।

তাই পবিত্র কোরআনে এজাতীয় কাজের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা কোরো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

দুর্নীতির অনেক শাখা রয়েছে, যার অন্যতম হচ্ছে ঘুষ। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, প্রিয়নবী (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০)। কারো ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে কিছু দেওয়াকে ঘুষ বলা হয়। কখনো আবার কোনো মধ্যস্থতাকারীকে ব্যবহার করে চুক্তির মাধ্যমেও নেওয়া হয়। কেউ আবার এটিকে নিজের অধিকার ভেবে সরাসরি চেয়েও বসে। পার্থক্য হলো, কারো চাওয়ার ধরন ভিক্ষুকের মতো হয়, আবার কেউ গুণ্ডা-মাস্তানদের মতো মানুষকে জিম্মি করেও তা আদায় করে থাকে। কেউ আবার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের গুণগান গাওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ নিয়ে থাকে। কেউ কেউ পরিচিত মুখ দেখলে ঘুষ চাইতে পারে না, তাই ওই বেচারার কাজও শেষ পর্যন্ত হয় না। এসব পরিস্থিতির মূলে থাকে কিছু হারাম অর্থ। অথচ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।’ (মু’জামুল আউসাত : ২০২৬)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে, তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)

ঘুষখোররা এতটাই নিচ ও জঘন্য হয় যে তারা রাষ্ট্রের মুচি, মেথরের কাছ থেকে ঘুষ নিতে পর্যন্ত লজ্জা বোধ করে না। তাদের টেবিলে জনগণের ফাইল যেন ভিক্ষার থালা হয়ে পড়ে থাকে। যতক্ষণ সেই থালায় ঘুষের টাকা পড়বে না, ততক্ষণ সেই ফাইলের কার্যক্রমও চলবে না।

পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আগমন করবে যে তার মুখমণ্ডলে এক টুকরা গোশতও থাকবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৭৪)

এই হাদিসটি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি (আমার মতে) দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দিষ্ট বেতন পাওয়ার পরও মানুষের কাছে ঘুষের আবদারকারীদের জন্যও প্রযোজ্য। এ ধরনের হারাম ভক্ষণের ফলে দিন দিন মানুষের ঈমান-আমল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানুষের ইবাদত, দোয়া কবুল হয় না। পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে একটি আয়াত তিলাওয়াত করা হলো, ‘হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো।’ তখন সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেন, হে সাআদ, তোমার পানাহারকে হালাল করো, তবেই তোমার দোয়া কবুল হবে। (আল মু’জামুল আউসাত, হাদিস : ৬৪৯৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!