অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর তাদের একদল নবীর কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের ঘর-বাড়িগুলো সত্যিই অরক্ষিত। আসলে সেগুলো অরক্ষিত ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তারা পালাতে চেয়েছিল।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ১৩)
অন্য আয়াতে মুনাফিকদের মনোভাব এভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে—‘আমাদের আশঙ্কা হয় যে আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৫২)
এমন মনোভাবের অধিকারী লোকেরা কত হতভাগা! পেট পূজা, গাড়ি-বাড়ি, দালান-কোঠা তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা আদৌ কখনো একবারের জন্যও আদর্শ ও পুণ্যবান লোকদের জীবনাদর্শের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েও দেখেনি। এরা দামি দামি গাড়ি, পোশাক, জুতা ও খাবার নিয়ে কোনো অজুহাত, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মনোমালিন্য, সমালোচনা বা তিরস্কার হজম করতে বাধ্য হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো সামান্য কারণে অনেকে দিন-রাত মর্মপীড়ায় ভোগেন। এমন সব বিষয় হলো এসব লোকদের দুর্দশা, দুর্বিপাক বা মসিবত।
প্রবাদ আছে, যখন কোনো পাত্র পানি শূন্য হয় তখন তা বায়ুপূর্ণ হয়। তাই যে বিষয় আপনাকে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে, তা নিয়ে একটু ভেবে দেখুন ও নিজেকে প্রশ্ন করুন। এটা কি আপনার শক্তি নষ্ট করার ও আপনাকে কষ্টে ফেলার যোগ্যতা রাখে? এটা এক অপরিহার্য প্রশ্ন। কেননা, এটা যা-ই হোক না কেন—এটা আপনার উদ্বিগ্নতার কারণ।
আপনার শরীর রক্ত-মাংসে গড়া। এ বিষয়টির জন্য শক্তি ও সময়ের অপচয় করছেন! যদি এটা (যে বিষয়টি আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে তা) আপনার শক্তি ও সময় নষ্ট করার যোগ্যতা না রাখে তাহলে (এটা নিয়ে ভেবে ভেবে) আপনি আপনার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সময়, জীবন, যৌবন ও ধন-সম্পদের এক বিশাল অংশ অপব্যয় করে ফেলছেন কেন?
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আপনাকে প্রতিটি জিনিসের যথাযথ মূল্যানুপাতে বিচার করতে হবে এবং তাকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। এর চেয়ে আরো বেশি সত্য হলো মহান আল্লাহর বাণী—‘অবশ্যই আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
অতএব, প্রতিটি অবস্থাকে তার আকার, ওজন, পরিমাণ ও গুরুত্ব অনুসারে বিবেচনা করুন এবং অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থাকুন।
নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিন। তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাছের নিচে বাইয়াত হয়ে (আনুগত্যের অঙ্গীকার করে) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাঁদের সঙ্গে এমন এক লোক ছিল, যার লক্ষ্য ছিল একটি হারানো উট আর এ চিন্তার বশীভূত হয়েই সে বাইয়াত থেকে বঞ্চিত থাকল। ফলে অন্যেরা যে পুরস্কার পেল তা থেকেও সে বঞ্চিত থাকল।
সুতরাং নগণ্য বিষয়ের চিন্তায় বিভোর হবেন না। যদি আপনি এ পরামর্শ মানেন, তাহলে দেখবেন, আপনার বেশির ভাগ দুশ্চিন্তা আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ড. আয়েজ আল-কারনির লা তাহজান গ্রন্থ অবলম্বনে
Leave a Reply