আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেছেন, ‘বিনয় ও নম্রতার মূল হলো, তুমি তোমার দুনিয়ার নিয়ামতের ক্ষেত্রে নিজেকে তোমার নিচের স্তরের লোকদের সঙ্গে রাখো, যাতে তুমি তাকে বোঝাতে পারো যে তোমার দুনিয়া নিয়ে তুমি তার চেয়ে মর্যাদাবান নও। আর নিজেকে উঁচু করে দেখাবে তোমার চেয়ে দুনিয়াবী নিয়ামত নিয়ে উঁচু ব্যক্তির কাছে, যাতে তুমি তাকে বোঝাতে পারো যে দুনিয়া নিয়ে সে তোমার ওপর মর্যাদাবান নয়।’
বিনয়-নম্রতার প্রকারভেদ
ক্ষেত্র বিবেচনায় বিনয় ও নম্রতাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে ভাগগুলো উল্লেখ করা হলো—
১. মানুষের সঙ্গে নম্রতা : মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণে নম্রতা অবলম্বনের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে বলেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে। যদি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ থেকে দূরে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো…।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
২. চাকর বা অধীনদের সঙ্গে নম্রতা : চাকর-চাকরাণী ও গৃহপরিচারিকার সঙ্গে সদাচরণ করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো খাদেম যখন তার খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকে যদি সঙ্গে না বসায় তাহলে সে যেন তাকে এক লুকমা বা দুই লুকমা খাবার দেয়। কেননা সে তার গরম ও কষ্ট সহ্য করেছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬০)
৩. জীব-জন্তুর সঙ্গে নম্রতা : জীব-জন্তু ও পশু-পাখির সঙ্গেও নম্রতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিশাম ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, আমি আনাস (রা.)-এর সঙ্গে হাকাম ইবনে আইয়ুবের কাছে গেলাম। তখন আনাস (রা.) দেখলেন, কয়েকটি বালক কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, কয়েকজন তরুণ একটি মুরগি বেঁধে তার দিকে তীর ছুড়ছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জীব-জন্তুকে বেঁধে এভাবে তীর ছুড়তে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫১৩)
শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) থেকে আমি দুটি কথা মনে রেখেছি, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের ওপর ‘ইহসান’ অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সঙ্গে হত্যা করবে, আর যখন জবাই করবে তখন দয়ার সঙ্গে জবাই করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবেহকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে।” (মুসলিম, হাদিস : ১৯৫৫)
বিনয় ও নম্রতার গুরুত্ব
বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ধীরস্থিরতা ও নম্রতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হও।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২১৫)
মহান আল্লাহ বিনয়ী মানুষদের প্রশংসায় বলেন, “দয়াময় আল্লাহর বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’…।” (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৬৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এটা আখিরাতের নিবাস, যা আমি নির্ধারণ করি তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। মুত্তাকিদের জন্য আছে শুভ পরিণাম।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৮৩)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি নম্র ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও চরিত্রহীন হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৪)
অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো সরলতার দরুণ দুর্বল প্রকৃতির লোক। মানুষ তাদের হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। তারা কোনো বিষয়ে কসম করলে আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করেন। রাসুল (সা.) আরো বলেন, আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো প্রত্যেক অনর্থক কথা নিয়ে ঝগড়াকারী বদমেজাজি ও অহংকারী।’ (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৫১০৬)
মহান আল্লাহ আমাদের বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply