চোগলখুরি সমাজে বিদ্বেষের আগুন জ্বালায়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
  • 507 পাঠক

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

—————————–

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের দোষ অন্যজনের কানে পৌঁছে দেয়াকে চোগলখোরি বলা হয়। যারা চোগলখোরি করে বেড়ায়, তাদের লক্ষ্য থাকে দুই ব্যক্তির মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেয়া।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা জানো চোগলখুরি কী? সাহাবিরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তা সঠিকভাবে অবগত। রাসুল (সা.) বলেন, চোগলখুরি হলো, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যের কাছে লাগানো।’ (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ, হাদিস : ৮৪৫)

গিবত ও চোগলখুরির মধ্যে পার্থক্য হলো, চোগলখুরির উদ্দেশ্য পরস্পরের মধ্যে বিবাদ ও বিরোধ তৈরি করা। আর গিবতকারীর মধ্যে তা থাকা জরুরি নয়। আর অন্যের দোষ, যা বাস্তবেই তার ভেতর আছে, তা বর্ণনা করার নাম গিবত। কিন্তু চোগলখুরি কখনো অন্যের নামে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমেও হতে পারে।

চোগলখুরি কবরের আজাবের অন্যতম কারণ। একবার রাসুল (সা.) কোথাও যাচ্ছিলেন। দুটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন। এরপর খেজুরের একটি ডাল দুই টুকরা করে কবর দুটিতে পুঁতে দেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সা.) বলেন, কবর দুটিতে শাস্তি হচ্ছে।

কিন্তু এমন কোনো গুনাহর কারণে শাস্তি হচ্ছে না, যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। সহজেই তারা ওই সব থেকে বাঁচতে পারত; কিন্তু বেঁচে থাকেনি। একজন প্রস্রাবের ফোঁটা থেকে বেঁচে থাকত না, অন্যজন চোগলখোরি করে বেড়াত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭২৮)

চোগলখুরের আরো শাস্তির কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.)-কে স্বপ্নে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসে চোগলখুরের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

সেখানে আছে, রাসুল (সা.)-কে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি, যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে তার মুখের এক ভাগ মাথার পেছন দিক পর্যন্ত, এভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পেছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে ওই ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। (বুখারি, হাদিস : ৭০৪৭)

চোগলখুরির ফলে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহ্নিশিখা জ্বলে ওঠে। চোগলখুরির নিন্দায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে বেশি শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগায়, তুমি তার আনুগত্য করবে না।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ১০-১১)

হাদিস শরিফে চোগলখুর জান্নাতে প্রবেশ না করার হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৯; মুসলিম, হাদিস : ১০৫)

চোগলখুরির একটি নিকৃষ্ট প্রক্রিয়া হলো, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে খেপিয়ে তুলে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানো। অনুরূপভাবে অনেক কর্মজীবী অফিসের বস কিংবা দায়িত্বশীলের কাছে অন্য কোনো কর্মজীবীর কথা তুলে ধরে।

এতে তার উদ্দেশ্য ওই কর্মজীবীর ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে ওই দায়িত্বশীলের শুভার্থী হিসেবে তুলে ধরা। এমন কাজ হারাম। এমন ব্যক্তির ক্ষমা নেই।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার মানুষের আমল (আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আল্লাহ প্রত্যেক এমন বান্দাকে ক্ষমা করেন, যারা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না।

তবে এমন ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা আছে। তখন বলা হবে, এ দুজনকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না তারা সংশোধনের দিকে ফিরে আসে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪০)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!