সুখ-দুঃখ নিয়ে জীবনের পরীক্ষা

  • আপডেট সময় শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
  • 504 পাঠক

————————-

মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল

———————–

দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ইত্যাদি অপ্রীতিকর অবস্থা পরীক্ষার বিষয়। তেমনি সুখ-শান্তি, সম্পদ-প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশ, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি প্রীতিকর অবস্থাও পরীক্ষার বিষয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি (আল্লাহ) মন্দ ও ভালো দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)

আল্লাহ যাচাই করেন, বান্দা প্রীতিকর অবস্থায় তাঁর আনুগত্য ও শোকর আদায় করে কি না এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় তাঁর আনুগত্য ও সবর করে কি না।

অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু দ্বারা পরীক্ষা সহজ

রোগব্যাধি, দৈন্যদশা, বিপদ-আপদ ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা দ্বারা যে পরীক্ষা করা হয়—তাতে পাস করা সহজ। কারণ এ অবস্থায় মানুষ সাধারণত আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। এমনকি কাফির-মুশরিকও বড় বড় মসিবতের সময় আল্লাহকে ডাকতে শুরু করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তরঙ্গমালা যখন মেঘচ্ছায়ার মতো তাদের আচ্ছন্ন করে, তখন তারা আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকে…।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ৩২)

কাঙ্ক্ষিত বস্তু দ্বারা পরীক্ষা কঠিন

সুখ-শান্তি, ধন-সম্পদ, সুস্থতা ইত্যাদি কাঙ্ক্ষিত অবস্থা দ্বারা যে পরীক্ষা করা হয়, তাতে পাস করা কঠিন। কারণ কাঙ্ক্ষিত অবস্থা দ্বারা পরীক্ষা করা হলে এটা যে পরীক্ষা তা-ই আমরা বুঝতে পারি না। ফলে এ ক্ষেত্রে করণীয়ও আদায় করি না। শোকর আদায় করি না। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, আমি সেগুলোকে তার জন্য শোভাকর বানিয়েছি, মানুষকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করার জন্য যে কে তাদের মধ্যে ভালো কাজ করে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৭)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তাদের বিত্তবান লোকদের (ঈমান ও আনুগত্যের) হুকুম দিই। কিন্তু তারা তাতে নাফরমানি করে, ফলে তাদের সম্পর্কে (পূর্ব নির্ধারিত) কথা সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তাদের ধ্বংস করে ফেলি।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ব্যাপারে দরিদ্রতার আশঙ্কা করি না; বরং আমার আশঙ্কা হয়, তোমাদের ওপর অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য হবে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের হয়েছিল। আর তোমরা প্রতিযোগিতা শুরু করবে, যেমন তারা করেছিল। তখন দুনিয়া তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন তাদের ধ্বংস করেছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৫৮)

যাবতীয় নিয়ামতের জবাবদিহি করতে হবে

মহান আল্লাহ যত নিয়ামত দিয়েছেন, সব কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের নিয়ামতরাজি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত : ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কোনো বান্দার পা ততক্ষণ পর্যন্ত নাড়াতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে (চারটি বিষয়ে) প্রশ্ন করা হবে, (এবং সে সেগুলোর যথাযত জবাব দেবে) ১. তার জীবন কোন কাজে ব্যয় করেছে। ২. তার জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে। ৩. তার সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, আর কোন পথে খরচ করেছে। এবং ৪. তার শরীর (দৈহিক শক্তি) কোন কাজে নিঃশেষ করেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৪)

মসিবতে নিরাশ হওয়া যাবে না

বেশি বিপদ-মসিবতের কারণে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহর রহমত থেকে কাফির ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। (সুরা আলাম নাশরাহ, আয়াত : ৫-৬)

ঈমানদারের সব কিছু কল্যাণকর

ঈমানদারের সব কিছু পজিটিভ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদারের অবস্থা কী অপূর্ব! তার সব কিছু তার জন্য কল্যাণকর। আর এটা শুধু মুমিনের বৈশিষ্ট্য। যদি সে সুখ-সচ্ছলতা পায়, তাহলে শোকর করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি দুঃখ-অনটনের শিকার হয়, তাহলে সবর করে। ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণের হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল

ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!