খ্যাতির মোহে যারা বেশি আক্রান্ত হয় : ইসলামে নিষিদ্ধ মোহগুলোর একটি খ্যাতির মোহ। সাধারণ সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ এই মোহে আক্রান্ত হয়। মানুষ যখন অর্থবিত্তে, ক্ষমতায়, নেতৃত্বে, জ্ঞানে-গুণে; এমনকি ধর্মাচারে বড় হয়ে ওঠে, তখন তার ভেতর খ্যাতির মোহ দেখা দেয়। ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.) বলেন, ‘নেতৃত্বপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা অন্যকে হিংসা করে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, মানুষের দোষ খোঁজে এবং (সে ছাড়া) অন্য কারো প্রশংসা করা হোক।’ (ফাতহুল মান্নান : ৩/৩৪৯)
খ্যাতির মোহ যেসব কারণে নিষিদ্ধ
ইসলাম খ্যাতির মোহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। হাদিসে এর কিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—
১. কল্যাণচিন্তা লোপ করে : মানুষের ভেতর যখন খ্যাতির মোহ প্রচণ্ড রূপ নেয়, তখন তার ভেতর থেকে যাবতীয় কল্যাণচিন্তা লোভ পায়। এমনকি সে তার পরকালীন চিন্তার কথা ভুলে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এমন তিনজন ব্যক্তির আলোচনা এসেছে, যারা পৃথিবীতে অনেক ভালো কাজ করেও পরকালে তাদের প্রাপ্তি ছিল শূন্য।
এই তিন ব্যক্তির প্রথম জন খ্যাতির মোহে জিহাদ করে শহীদ হয়েছিল, দ্বিতীয় জন খ্যাতির মোহে জ্ঞানার্জন করেছিল এবং তৃতীয় জন খ্যাতির মোহে দান করেছিল। তাদের আল্লাহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রত্যাশা ছিল মানুষের কাছে খ্যাতি আর তোমরা তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের প্রাপ্তি শূন্য।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৩৭)
২. দ্বিনের সামগ্রিক ক্ষতি : খ্যাতির মোহ মানুষের নিয়তের বিশুদ্ধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে তার সামগ্রিক দ্বিনদারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)
৩. পরকালীন লাঞ্ছনা : খ্যাতির মোহ মানুষকে পার্থিব জীবনে বিপদগ্রস্ত এবং পরকালীন জীবনে লাঞ্ছনার মুখোমুখি করে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সেরূপ পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০২৯)
মনীষীদের দৃষ্টিতে খ্যাতির মোহ : সর্বযুগের মুসলিম মনীষীরা খ্যাতির মোহ ত্যাগে মুসলিমদের উৎসাহিত করেছেন। আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘প্রকৃত আলেম ও নেককার বান্দারা খ্যাতি অপছন্দ করেন। তাঁরা খ্যাতির কারণগুলো এড়িয়ে চলেন এবং মানুষের আড়ালে থাকার চেষ্টা করেন।’ (মাজমুউ রাসায়িলি ইবনে রজব : ২/৭৫৫)
আল্লামা ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য উচিত নয় খ্যাতির প্রত্যাশা করা। চাই তা ভালো কাজে হোক বা তা মন্দ কাজে হোক।’ (তাহজিবুল আসার, পৃষ্ঠা ৩)
খ্যাতির মোহ থেকে আত্মরক্ষা জরুরি : খ্যাতির মোহ তৈরি হতে পারে—এমন বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করা মুমিনের কর্তব্য। যেমন মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষের ভেতর খ্যাতির মোহ তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার সম্পর্কে ভালো জানেন আমার থেকেও এবং আমি নিজের সম্পর্কে বেশি জানি তাদের চেয়ে। হে আল্লাহ! তারা যে ধারণা পোষণ করে আমাকে তার কল্যাণ দান করুন। তারা যা জানে না সে ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করুন। তাদের কথার ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করবেন না।’ (আদাবুদ-দ্বিন ওয়াদ-দুনিয়া, পৃষ্ঠা ২৫১)
আল্লাহ আমাদের খ্যাতির মোহ থেকে আত্মরক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply