বড় কিছু অর্জন করতে গেলে বড় কিছু বিসর্জন দিতে হয়। বড় কোনো পুরস্কার পেতে গেলে বড় ধরনের পরীক্ষা দিতে হয়। জান্নাতের মহাপুরস্কার লাভ করতে গেলে দুনিয়ায় বড় বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তাই বহু ঈমানদারের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ লেগে থাকে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনের জন্য দুনিয়া কারাগারসদৃশ ও কাফিরের জন্য জান্নাতসদৃশ। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৫৬)
দুনিয়াবি কষ্টগুলো এক ধরনের পরীক্ষা। আল্লাহ কখনো সুখ-শান্তি দিয়ে পরীক্ষা করেন আবার কখনো রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)
বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন। নিম্নে আল্লাহর পরীক্ষা গ্রহণের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হলো—
১. গুনাহ মাফ ও পুরস্কার প্রদান : ইবরাহিম (আ.)-কে মহান আল্লাহ নানাভাবে পরীক্ষা করেছেন। সব পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে এর যথাযথ প্রতিদান দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার রব কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানিয়েছি। সে বলল, আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও? আল্লাহ বলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৪)
২. পরিশুদ্ধ করা : পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ উত্তমকে মন্দ থেকে পৃথক করে নেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায় আল্লাহ কোনোক্রমেই বিশ্বাসীদের ফেলে রাখবেন না, যে পর্যন্ত না তিনি ভালোদের থেকে মন্দদের পৃথক করেন। আর আল্লাহ অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের কাছে গোচরীভূত করবেন না, তবে আল্লাহ তাঁর রাসুলদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা নির্বাচিত করেন…।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৯)
৩. মানবতার স্বরূপ প্রকাশ : ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে—তাকে পরীক্ষা করার জন্য। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। হয়তো সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : দাহর/ইনসান, আয়াত : ২-৩)
মূলত মানুষের প্রকৃত স্বরূপ তার কাছে স্পষ্ট করার জন্য আল্লাহ বিভিন্ন পরীক্ষা করেন।
৪. ধৈর্যশীলদের বাছাই করা : বিপদরূপী পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ মূলত তাঁর ধৈর্যশীল বান্দাদের বেছে নেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পত্তি, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
৫. উত্তম আমলকারী নির্ণয় করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)
এ ছাড়া আরো বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন।
Leave a Reply