মারজিয়া আক্তার
—————
অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া সত্যের ওপর অবিচল থাকতে সাহায্য করে। গভীর ধৈর্য ও পরমতসহিষ্ণুতা ছিল রাসুল (সা.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয় হিজরিতে বদর যুদ্ধে বিজয়ের পর যুদ্ধবন্দিদের বিষয়ে তিনি সাহাবিদের তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দেন। ফলে সাহাবিরা নিজেরা খেজুর খেয়ে বন্দিদের রুটি খাওয়ান। (ইবনে হিশাম : ১/৬৪৫)
অথচ ওই সময় মদিনায় খেজুর ছিল সাধারণ খাদ্য এবং রুটি ছিল মূল্যবান খাদ্য। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৩/৩০৭)
রাসুল (সা.) অন্যের মতামত বা কথাকে গুরুত্ব দিতেন। এ সম্পর্কে একটি হাদিসে এসেছে, আবু উমামা (রা.) বলেন, এক তরুণ রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাকে জিনা করার অনুমতি দিন। এ কথা শুনে উপস্থিত লোকজন তার কাছে এসে তাকে ধমক দিয়ে বলল, থাম! থাম! রাসুল (সা.) বলেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।
অতঃপর সে রাসুল (সা.)-এর খুব কাছে এসে বসল। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা (অন্যের সঙ্গে জিনা করা) পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! মানুষেরা এটা তাদের মায়েদের জন্য পছন্দ করবে না।
তিনি বলেন, তোমার কন্যার জন্য কি তা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো মানুষ এটা তাদের মেয়েদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বলেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো ব্যক্তিই এটা তাদের বোনদের জন্য পছন্দ করবে না।
তিনি বললেন, তাহলে তোমার ফুফুর জন্য কি এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো পুরুষ এটা তাদের ফুফুদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বলেন, তবে তোমার খালার জন্য কি এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো মানুষ এটা তাদের খালাদের জন্য পছন্দ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তার ওপর হাত রেখে দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দাও, তার হৃদয় পবিত্র করে দাও এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করো। এরপর ওই যুবক আর কারো (কোনো নারীর) প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২২৬৫)
এভাবে রাসুল (সা.) অন্যকে স্বাধীনভাবে মতামত পেশ করার সুযোগ দিতেন। আর মতামত ভুল হলে তিনি তা শুধরে দিতেন।
সাহাবায়ে কিরামও অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। যেমন—ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের প্রাক্কালে খ্রিস্টান নেতারা শর্ত দিল যে খলিফাকে রাজধানী ছেড়ে এখানে আসতে হবে। তখন খলিফা ওমর (রা.) উসমান (রা.)-এর সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তিনি বলেন, এটা হীনকর শর্ত। অতএব তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করুন, যাতে তারা সন্ধিতে বাধ্য হয়। অতঃপর তিনি আলী (রা.)-এর কাছে পরামর্শ নিলেন।
তিনি বলেন, অবরোধে কালক্ষেপণ ও লোকক্ষয়ের আশঙ্কা বেশি থাকে। তার চেয়ে আপনার সেখানে যাওয়াটাই উত্তম হবে। খলিফা শেষোক্ত পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং আলী (রা.)-কে খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে তিনি জেরুজালেম রওনা হন। (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২০৮; আল-বিদায়া ৭/৫৫)
সুতরাং অন্যের মতামত গ্রহণ করার মতো মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। শুধু আমার কথা অন্যরা মানবে; আমারটাই সঠিক—এটা না-ও হতে পারে।
Leave a Reply