আরবি ‘ফাররা’ শব্দের অর্থ—কেউ একজন ভয়ে ছিল এবং সে জানত যে সে বিপদে আছে, তাই সে কোনো একটি আশ্রয়স্থলের দিকে দৌড়ে গিয়ে নিজেকে বিপদ থেকে বাঁচাল। আরবি ‘ফাররা’ শব্দের অর্থ এটিই। বিপদ থেকে নিরাপদ কোনো স্থানে দৌড়ে পালানো।
আমাদের ক্লাসিক্যাল বইগুলোতে দৌড়ে পালানোর পাঁচটি ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক কিসের থেকে আপনি পালাচ্ছেন? আর ঠিক কিসের দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন?
এক নম্বর : কুফর থেকে ঈমানের দিকে। আগের যুগের একজন আলেম সাহেল ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে পালিয়ে এসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকে ধাবিত হই। আমাদের অন্তর আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকা উচিত নয়।
দুই নম্বর : অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের দিকে দৌড়ানো। আমরা সব ধরনের অজ্ঞতা থেকে পালিয়ে বেড়াই। বিশেষ করে ধর্ম বিষয়ে আমরা অজ্ঞ থাকি না। আমরা দ্বিনের জ্ঞান অর্জনের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই।
জেনে রাখুন, আল্লাহ হলেন আল-আলিম অর্থাৎ যিনি সব কিছু জানেন। আর তিনি আমাদের জন্য শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে। আমাদের ধর্ম হলো ইলম ও জ্ঞানভিত্তিক। আমাদের ধর্মের ভিত্তিই হলো আল্লাহ সম্পর্কে জানা এবং কিভাবে তাঁর ইবাদত করতে হবে, তা শেখা।
তিন নম্বর : আমরা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে পালিয়ে এসে তাঁর আনুগত্যের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে পালাও আর তাঁর আনুগত্যের দিকে এগিয়ে যাও। আমরা আরো বলতে পারি—আল্লাহর শাস্তি থেকে পালিয়ে তাঁর রহমতের দিকে এগিয়ে যাও।
চার নম্বর : আমরা আমাদের প্রয়োজনগুলোর জন্য আল্লাহর দিকে দৌড়াই। যখনই আমরা বিপদে পড়ি, যখনই আমাদের কিছুর দরকার হয়, সবার আগে আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে চাওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…তারা আমাকে ডাকত আশা নিয়ে ও ভয় হয়ে…।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)
পাঁচ নম্বর : গাফিলতি থেকে পালিয়ে মহৎ জীবনের দিকে দৌড়ে যাওয়া। অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন জীবন থেকে পালিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং মহৎ জীবনের দিকে দৌড়ে যাওয়া। আমাদের নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আল্লাহ আমাদের এবং তাদের পথ দেখিয়ে দিন। তারা শুধু টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব, গেমস নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে। এভাবে নিজেদের সব অনুভূতিকে অসার করে ফেলছে। এভাবে তো আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বড় করতে পারি না।
তাদের শেখাতে হবে, ‘ফাফিররু ইলাল্লাহ—আল্লাহর দিকে দৌড়াও।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫০)
এই গাফিলতি পরিত্যাগ করো। এই অমনোযোগিতা পরিহার করো। আল্লাহকে খোঁজো। আল্লাহকে জানো। কারণ যখন তুমি আল্লাহকে না চেনো, যখন আল্লাহকে ভুলে যাও, তখন তুমি আসলে তোমার নিজেকেই ভুলে যাও। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদের করেছেন আত্মভোলা…।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৯)
কারণ যারা আল্লাহকে ভুলে যায়, তারা আসলে শেষমেশ নিজেদেরই ভুলে যায়। এটি খুবই শক্তিশালী একটি মনস্তাত্ত্বিক আয়াত। তুমি যদি আল্লাহকে ভালোভাবে না জানো, তুমি নিজেকেই জানো না। অর্থাৎ তোমার নিজের অস্তিত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যমে তুমি নিজেকে আবিষ্কার করবে। জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে। জীবনে প্রকৃত সুখ-শান্তি খুঁজে পাবে যখন তুমি আল্লাহর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
আর যদি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলো, তবে তো তুমি বাঁচার জন্য কোনো অর্থ খুঁজে পাবে না। সম্ভবত এ কারণে আমরা চারদিকে এত বেশি পরিমাণে মানসিক অসুস্থতা দেখতে পাচ্ছি। কারণ মোটের ওপর ধার্মিকতা হ্রাস পাচ্ছে।
আল্লাহ কোরআনে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘…জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরগুলো প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
আমরা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে জীবনের অর্থ খুঁজে পাই।
ড. ইয়াসির কাদিরের লেকচার অবলম্বনে মাহমুদুল হাসান আরিফ
Leave a Reply