—————————
কোনো মানুষের বিরুদ্ধে বদদোয়া করা মুমিনের স্বভাব নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী, ভর্ত্সনাকারী, লানতকারী, অশ্লীলভাষী ও বদ-স্বভাবের হতে পারে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)
বিশেষ করে ব্যক্তি স্বার্থে কাউকে বদদোয়া করা উচিত নয়। রাসুল (সা.) ব্যক্তি স্বার্থে কখনো কারো প্রতিশোধ নিতেন না।
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-কে যখনই দুটি জিনিসের কোনো একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন—যদি তা গুনাহ না হতো। গুনাহ থেকে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নবী (সা.) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৬০)
তবে দ্বিনি ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে বদদোয়ার আশ্রয় নেওয়ায় কোনো বাধা নেই। ইরানের বাদশাহ পারভেজ কর্তৃক ইসলামের দাওয়াতসংবলিত রাসুল (সা.) প্রেরিত পত্র ছিঁড়ে ফেলার খবর শুনে তিনি তার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৫৬৯৩)
৭০ জন সাহাবিকে প্রতারণার মাধ্যমে হত্যাকারী রেল ও জাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে বদদোয়া করে তিনি এক মাস ধরে কুনুতে নাজেলাহ পাঠ করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বনু সুলায়মের ৭০ জন লোকের একটি দলকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বনু আমিরের কাছে পাঠান। দলটি সেখানে পৌঁছলে আমার মামা (হারাম ইবনে মিলহান) তাদের বলেন, আমি সর্বাগ্রে বনু আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে আল্লাহর রসুল (সা.)-এর বাণী পৌঁছাতে পারি, (তবে তো ভালো) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে।
অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বাণী শোনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবার, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি।
অতঃপর কাফিররা তার অন্য সঙ্গীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সবাইকে শহীদ করল; কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন। তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম (রহ.) আরো (অতিরিক্ত) উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সঙ্গে অন্য একজন ছিলেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) নবী (সা.)-কে খবর দিলেন যে প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এই আয়াত পাঠ করতাম—‘আমাদের জাতিকে জানিয়ে দাও যে আমরা আমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। ’
পরে এ আয়াত মানসুখ (রহিত) হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে আল্লাহর রাসুল (সা.) ক্রমাগত ৪০ দিন রিল, জাকওয়ান, বনু লিহয়ান ও বনু উসাইয়ার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮০১)
এ হাদিস থেকে জানা যায়, ব্যক্তি স্বার্থে বা নিজস্ব স্বার্থে বদদোয়া বা প্রতিশোধ নেওয়া অনুচিত। কিন্তু দ্বিনি স্বার্থে কারো জন্য বদদোয়া করা বা প্রতিশোধ নেওয়া বৈধ।
Leave a Reply