আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবন গঠনের সাত সূত্র

  • আপডেট সময় সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
  • 346 পাঠক

কাসেম শরীফ

————–   

রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে সাহাবিদের বিভিন্ন উপদেশ দিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আবু জর গিফারি (রা.)-কে সাতটি বিশেষ উপদেশ দিয়েছেন, যেগুলো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবন গঠনে সহায়ক।

আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে সাতটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে গরিব-মিসকিনদের ভালোবাসতে বলেছেন এবং তাদের নিকটবর্তী হতে বলেছেন।

তিনি আমাকে নিজের চেয়ে নিচের মানুষের দিকে তাকাতে বলেছেন এবং নিজের চেয়ে (পার্থিব ক্ষেত্রে) ওপরের মানুষের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছেন, যদিও তারা দূরে সরে যায়। তিনি আমাকে (আল্লাহ ছাড়া) কারো কাছে কিছু চাইতে নিষেধ করেছেন। আর আমাকে তিক্ত হলেও সত্য বলতে বলেছেন। তিনি আমাকে আল্লাহর পথে কোনো তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করতে নিষেধ করেছেন। এবং আমাকে বেশি বেশি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করতে বলেছেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২১৪১৫; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ৮১১)

১. অসহায় মানুষকে ভালোবাসা : অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে ভালোবাসা একটি মহৎ মানবিক গুণ। বিশেষ কারণে সৃষ্টিগতভাবে ধনী ও গরিব শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…আমিই (আল্লাহ) তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে। আর একজনকে অন্যজনের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে তারা একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে…। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

সুতরাং সম্পদহীনতার কারণে কোনো মানুষকে খারাপ চোখে দেখা যাবে না। অর্থ নেই বলে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা যাবে না। তাদের ভালোবাসতে হবে এবং মানবিক মর্যাদা দিতে হবে। মক্কার কাফিররা দরিদ্র মুসলমানদের রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবার থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানায়।

এর জবাবে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের রবকে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে, তাদের তুমি বিতাড়িত করো না। তাদের কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয়। আর তোমার কোনো কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে তুমি তাদের বিতাড়িত করবে। করলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫২)

২. নিজের চেয়ে নিচের মানুষের অবস্থার দিকে তাকানো : সম্পদে, মান-সম্মানে, ক্ষমতায়, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে নিজের চেয়ে নিচের মানুষের দিকে তাকালে নিজের ভেতর কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি হয়। ফলে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা সহজ হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিয়ো—তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষের দিকে নয়। এতে তোমাদের আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত নগণ্য মনে হবে না। ’ তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৩)

৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। ’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৩৮)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি আরোপ করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৫)

৪. কারো কাছে কিছু চাইবে না : যথাসম্ভব কারো কাছে কিছু চাওয়া উচিত নয়। এটা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তাহলে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হব। উত্তরে সাওবান (রা.) বলেন, আমি। এরপর তিনি কারো কাছে কিছু সওয়াল করেননি। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪৩)

৫. সদা সত্য কথা বলা : তিক্ত হলেও সদা সত্য কথা বলা সাহসী মানবিক গুণ। সত্য কথা কারো জন্য তিক্ত হলেও সত্য কথা বলতে হবে, সত্যকে আদৌ বর্জন করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘…তোমরা যখন কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে—যদিও তা স্বজনদের সম্পর্কে হয়…। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫২)

৬. নিজে সৎ হলে নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না : অসীম সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করবে। আল্লাহর পথে লড়াইকারী মুজাহিদদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…তারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না…। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৪)

৭. বেশি বেশি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করা : ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বাক্যটির মধ্যে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের অনুভূতি আছে। দোয়াটির অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কারো কোনো শক্তি নেই।

আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী করিম (সা.) একটি গিরিপথ দিয়ে অথবা চূড়া হয়ে যাচ্ছিলেন, যখন ওপরে উঠলেন তখন এক ব্যক্তি উচ্চ কণ্ঠে বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ’

বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুল (সা.) খচ্চরের ওপর ছিলেন। তিনি বলেন, তোমরা কোনো বধির কিংবা কোনো অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। তারপর তিনি বলেন, হে আবু মুসা, অথবা বলেন, হে আবদুল্লাহ, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনভাণ্ডারের একটি বাক্য বলে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, বলে দিন। তিনি বলেন, তা হচ্ছে, ‘ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৯)

এই দোয়া জান্নাতের দরজাতুল্য। কাইস ইবনে সাদ ইবনে উবাদাহ (রা.) বলেন, আমি নামাজরত অবস্থায় নবী (সা.) আমার কাছ দিয়ে গমন করেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বলেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮১)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!