যেসব বিষয়ে নবীজি (সা.) শপথ করেছেন

  • আপডেট সময় সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
  • 460 পাঠক

সাইফুল ইসলাম তাওহিদ   

————————–

ইসলামের বিধি-বিধানগুলো দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট। রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান বর্ণনা করে গেছেন। এই বিধান বর্ণনা করার সময় তিনি উৎসাহ—অনুপ্রেরণা, সতর্কতা, শাস্তি ও প্রতিদানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় বর্ণনা করার সময় রাসুল (সা.) শপথ করেছেন।

রাসুল (সা.) শপথ না করলেও সাহাবায়ে কেরাম তা বিনা বাক্যে বিশ্বাস করতেন। তার পরও বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝানোর জন্য রাসুল (সা.) প্রয়োজনের তাগিদে শপথ বাক্যসহ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। সে রকম বিষয়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।জান্নাতে আল্লাহকে দেখার বিষয়ে : মুমিনগণ জান্নাতে যাওয়ার পর তাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ। জান্নাতে মুমিনগণ আল্লাহ তাআলাকে দেখার ব্যাপারে রাসুল (সা.) শপথ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (রা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কী কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তখন রাসুল (সা.) বলেন, দ্বিপ্রহরে মেঘহীন স্বচ্ছ আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের কী কোনো কষ্ট হয়? সাহাবারা বলেন, না।

রাসুল (সা.) আবার বলেন, পূর্ণিমার রাতে মেঘহীন আকাশে চাঁদকে দেখতে তোমাদের কী কোনো কষ্ট হয়? সাহাবারা বলেন, না। এরপর বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ, এ দুটির কোনো একটিকে দেখতে তোমাদের যে পরিমাণ কষ্ট হয়, তোমাদের রবকে দেখতেও সে পরিমাণ কষ্ট হবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৮)

যেসব বিষয়ে নবীজি (সা.) শপথ করেছেন

হাউসে কাউসারের বিষয়ে : উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.) বের হলেন এবং তিনি ওহুদ যুদ্ধের শহিদদের জানাজার নামাজ পড়লেন। এরপর মিম্বরে এসে বলেন, ‘আমি তোমদের অগ্রগামী হব এবং তোমাদের ওপর সাক্ষী হব। শপথ আল্লাহর, আমি এই মুহূর্তে তোমাদের আমার হাউসের নিকট দেখতে পাচ্ছি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪২৬)

সাহাবাদের মর্যাদা বর্ণনার বিষয়ে : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবাদের গালি দিয়ো না। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করে, তার পরও তাদের কারোর এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দের সমান হবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪০)

মুমিনদের ভালোবাসার বিষয়ে : এক মুমিন অন্য মুমিনকে ভালোবাসবে এটা ইসলামের নির্দেশ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ, তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো সালামের প্রসার ঘটানো। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৮)

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়ে : ইসলাম প্রতিবেশীর হকের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলাম প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়াকে হারাম করেছে। চাই সেটা কথায় হোক কিংবা কাজে। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হারাম, বিষয়টি বর্ণনা করতে রাসুল (সা.) শপথ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, ওই ব্যক্তি ইমানদার নয়, আল্লাহর শপথ, ওই ব্যক্তি ইমানদার নয়, আল্লাহর শপথ, ওই ব্যক্তি ইমানদার নয়। সাহাবারা বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কে ইমানদার নয়? তখন রাসুল (সা.) বলেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে ব্যক্তি ইমানদার নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬)

সুরা ইখলাসের মর্যাদা বর্ণনার ক্ষেত্রে : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা আল-ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে রাসুল (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হলো। রাসুল (সা.) তখন বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৩)

তাওবা ও ইস্তিগফারের ফজিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা মোটেও গুনাহ না করো, তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন এবং এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহও করবে, তাওবা-ইস্তিগফারও করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭৪৯)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!