মুফতি আবুল কাসেম
——————–
একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এটিই মহাসাফল্য।’ যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন, তার সবকিছুই অর্জিত হবে অনায়াসে। অথচ আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কত কিছুই না করি! নিচে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ১০টি উপায় আলোচনা করা হলো।
আল্লাহর সন্তুষ্টির আকাক্সক্ষা : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বান্দা যদি সর্বদা তার রবের সন্তুষ্টির আকাক্সক্ষা করতে থাকে। একসময় আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইল (আ.)কে বলে দেন যে, অমুক বান্দা আমার সন্তুষ্টিপানে উৎসুক, তাই তাকে আমি আমার দয়ার চাদরে ঢেকে নিলাম। (মুসনাদে আহমদ ২২৪৫৪)
মিসওয়াক করা : মিসওয়াক করার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মিসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ি : ৫)
পানাহারের পর আলহামদুলিল্লাহ বলা : প্রিয়নবী (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সে বান্দার ওপর সন্তুষ্ট, যে খাবার খাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে অথবা পানীয় পান করার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে। (রিয়াজুস সালেহিন : ১৪৪)
পিতার সন্তুষ্টি অর্জন : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতার সন্তুষ্টির মধ্যেই রবের সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই রবের অসন্তুষ্টি রয়েছে। (তিরমিজি : ১৮৯৯)
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়, মানুষের দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী হয় আল্লাহ তাকে মানুষের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। (তিরমিজি : ২৪১৪)
বিপদাপদে সন্তুষ্টি : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে প্রতিদান তত মহান হবে। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন বিভিন্ন বালা-মুসিবত দিয়ে তাদের পরীক্ষা করেন। সুতরাং যারা এর ওপর সন্তুষ্ট থাকে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা এর ওপর অসন্তুষ্ট থাকে তাদের জন্য রয়েছে মহান রবের অসন্তুষ্টি। (সুনানে তিরমিজি : ২৩৯৬)
সকাল-সন্ধ্যা দোয়া পাঠ : প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুমিন বান্দা সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া ‘রাজিতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামী দ্বীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করবে’ আল্লাহ তায়ালা তাকে বিচার দিবসে অবশ্যই সন্তুষ্ট করে দেবেন। (আল আহাদ ওয়াল মাসানিলি আহমদ : ৪৭১)
পবিত্র বাক্য উচ্চারণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কখনও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কথা বলে যার সম্পর্কে সে ধারণও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে অথচ আল্লাহ তায়ালা তার এ কথার বিনিময়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত সন্তুষ্টি লিখে দেন। (তিরমিজি : ২৩১৯)
আল্লাহর জিকির : হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে অধিক উত্তম কাজ সম্পর্কে জানাব না, যা তোমাদের মালিকের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু, সোনা-রূপা, দান-সদকা করার চেয়েও বেশি ভালো এবং তোমাদের শত্রুর মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের নিধন করা ও তোমাদেরকে তাদের নিধন করার চেয়েও উত্তম? তারা বললেন, হ্যাঁ! তিনি বললেন, তা হলো আল্লাহ তায়ালার জিকির। (সুনানে তিরমিজি : ৩৩৭৭)
তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিন কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা হলো-
১. তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকেও শরিক করবে না।
২. আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) মজবুত করে ধরবে।
৩. রাষ্ট্রপ্রধানকে নসিহত করবে।
আর যে তিন কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন, তা হলো-
১. অধিক কথা বলা।
২. অপব্যয় করা।
৩. অধিক ভিক্ষা করা। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ১৮০৪)।
তবে নেক আমলের পাশাপাশি নিজেকে গুনাহমুক্ত রাখতে হবে। তা হলে আমরা আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া
বটগ্রাম, সুয়াগাজী, কুমিল্লা
Leave a Reply