বাড়ি যেভাবে বরকতময় হয়

  • আপডেট সময় বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২
  • 386 পাঠক

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা 

——————————–

বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সবারই প্রত্যাশা থাকে একটি শান্তি-সুখের নীড়। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই তার চেষ্টাও চালিয়ে যায়। কিন্তু শুধু উপকরণ দিয়ে বাড়িকে সুন্দর করা গেলেও শান্তি-সুখের নীড় নিশ্চিত করা যায় না।

এ জন্য প্রয়োজন মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। আর তা শুধু তাঁর স্মরণের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। আল্লাহর স্মরণের মাত্রা অনুযায়ী ঘর-বাড়ি বরকতময় হয়।১. বিসমিল্লাহ বলে বাড়িতে প্রবেশ : কোনো প্রাচীর বা কোনো নিরাপত্তাকর্মী বাড়িতে শয়তানের প্রবেশ বন্ধ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র কার্যকর অবলম্বন হলো মহান আল্লাহর স্মরণ তথা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বাড়িতে প্রবেশ করা। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার গ্রহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, তোমাদের রাত যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা (এ বাড়িতে) হলো না; কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহার ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৮১)

২. সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ : সালাম পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, নিরাপত্তা ও ভালোবাসা প্রকাশের অতুলনীয় মাধ্যম। সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার অর্থ হলো, শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে প্রবেশ করা। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে, তখন সশব্দে সালাম করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বরকতময় ও পবিত্র অভিবাদন। ’ (সুরা নূর, আয়াত : ৬১)

৩. আল্লাহর নামে বাড়ির সব কাজ : বাড়ির সাধারণ কাজও আল্লাহর নামে করতে হবে। ঘুমানোর আগে রাসুল (সা.) কিছু কাজ করতে বলেছেন, প্রত্যেক বাড়িতে তা মেনে চলা জরুরি। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখো। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তাদের ছেড়ে দিতে পারো। আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করো, আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার বাতি নিভিয়ে দাও, আল্লাহর নাম নিয়ে মশকের মুখ বন্ধ করো, আল্লাহর নাম নিয়ে কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে দিয়ে হলেও তোমার পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩১০৬)

৪. সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আল্লাহু আকবার, নামতে সুবহানাল্লাহ : সময়ের পরিবর্তনে এখন বহুতল ভবনে বসবাস বেড়েছে। অনেকেরই বাসস্থানে সিঁড়ি বেয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সিঁড়ি বা লিফটে ওপর উঠতে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশস্বরূপ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নত। জাবির (রা.) বলেন, আমরা যখন ওপরের দিকে উঠতাম, বলতাম ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন নিচের দিকে নামতাম, বলতাম ‘সুবহানাল্লাহ’। (বুখারি, হাদিস : ২৮৩১)

৫. সুন্নত ও নফল নামাজ ঘরে আদায় : ফরজ নামাজগুলো মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করার বিকল্প নেই। তাহাজ্জুদসহ অন্য সুন্নত ও নফল নামাজগুলো ঘরে আদায় করা শ্রেয়। এর মাধ্যমে ঘর-বাড়ি রহমত ও বরকতময় হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে নামাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের কিছু নামাজ (সুন্নত ও নফল) তোমাদের ঘরে আদায় করবে। তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ১১৩১, মুসলিম, হাদিস : ১৮৫৬)

৬. কোরআন তিলাওয়াত : বাড়িতে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত রহমত-বরকত অর্জন এবং শয়তান দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ো না। অবশ্যই শয়তান সেই ঘর থেকে পলায়ন করে, যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬০)

৭. কুকুর, প্রাণীর ছবি ও মূর্তি পরিহার : কুকুর, প্রাণীর ছবি ও মূর্তি আল্লাহর রহমত ও বরকতের অন্তরায়। এসব রাখলে রহমত ও বরকতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। কাজেই এসব থেকে বাড়ি-ঘর মুক্ত রাখতে হবে। আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৫; মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩৬)

৮. অপচয় ও অপব্যয় পরিহার : বাড়ি নির্মাণ ও জীবন যাপনে বিলাসিতা, অপচয় ও অপব্যয় পরিহার করে চলা উচিত। বৈধ কাজে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করা হলো ইসরাফ বা অপচয়। আর অবৈধ কাজে ব্যয় করা হলো তাবজির বা অপব্যয়। দুটিই ইসলামে দোষণীয় ও নিষিদ্ধ। প্রথমটির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

দ্বিতীয়টির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আর কিছুতেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ২৬-২৭)

৯. গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র পরিহার : বর্তমান কালের গান, বাদ্য-বাজনা ও সংগীতচর্চা ইসলামী সংস্কৃতির অংশ নয়। বরং এগুলো ইসলামী জীবন যাপনে অত্যধিক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘গান-বাজনা অন্তরে কপটতা উদগত করে। যেমন পানি সবজি উৎপাদন করে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২৯)। পরিশেষে বাড়িতে ইসলামী পরিবেশ বজায় রাখা একান্ত জরুরি। মহান আল্লাহ সবার ঘর-বাড়িকে শান্তি-সুখ ও বরকতময় বাড়িতে রূপান্তর করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক|

আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়|

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!