হাসির সৌন্দর্য, হাসির কদর্য

  • আপডেট সময় সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২
  • 289 পাঠক

আতাউর রহমান খসরু

————————   

হাসি আনন্দ, সন্তোষ ও স্নিগ্ধ মনের পরিচায়ক। একটি সুন্দর হাসি পাল্টে দিতে পারে মানুষের জীবনের গতিপথ। অনুপ্রেরণা হতে পারে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। শর্ত হলো হাসিটি হতে হবে সুন্দর ও কোমল।

বিপরীতে একটি কর্কশ ও রূঢ় হাসি মানুষের হৃদয়ে বিভীষিকার অন্ধকার সৃষ্টি করতে পারে। ইসলাম মানুষের হাসি স্নিগ্ধ ও মনোরোম করার নির্দেশ দেয়। সুন্দর হাসিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

হাসির সৌন্দর্য

আল্লাহ, তাঁর নবী-রাসুল (আ.), সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মুসলিম উম্মাহর আদর্শ। তাঁদের হাসিতেই প্রকাশ পেয়েছে হাসির সৌন্দর্য।

আল্লাহর হাসি : বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মহান আল্লাহও হাসেন। যদিও তাঁর হাসি আমাদের মতো নয়, তাঁর হাসি অকৃত্রিম এবং তা আল্লাহর শান ও মর্যাদার অনুরূপ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ হাসেন। যারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর তওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর রাস্তায় শহীদ বলে গণ্য হয়েছে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮২৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাসি : হাদিসের বর্ণনা অনুসারে নবীজি (সা.) অন্য সব বিষয়ের মতো হাসিতেও মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন। তিনি বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসি দিতেন, কখনো কখনো অনুচ্চ শব্দে হাসতেন। যে শব্দ তার নিকটবর্তী লোকেরাই শুনতে পেত, দূরের লোকেরা শুনতে পেত না। আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় মুচকি হাসতেন। ’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৯)

নবী-রাসুলের হাসি : অন্যান্য নবী-রাসুল (আ.)-ও সুন্দর ও মার্জিত হাসির অধিকারী ছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে (সুলাইমান আ.) পিপীলিকার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। ’

(সুরা : নামল, আয়াত : ১৯)

নবী পরিবারের হাসি : পারিবারিক পরিমণ্ডলে হাসিমুখ জীবনকে আনন্দময় করে। পবিত্র কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল এবং সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭১)

সাহাবিদের হাসি : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরা কি হাসতেন? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। তবে তাঁদের অন্তরে ঈমান ছিল পাহাড়ের চেয়ে বড়। ’

(আল-মাউসুয়াতুল কুবরা : ৩১/১৯৩)

জান্নাতিদের হাসি : পরকালে জান্নাতের মুখেও থাকবে আনন্দের হাসি। ইরশাদ হয়েছে, ‘বহু মুখমণ্ডল সেদিন উজ্জ্বল হবে, সহাস্য ও প্রফুল্ল। ’

(সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৮-৩৯)

অন্যের মন ভালো করতে হাসি : কখনো কখনো মানুষের হাসি অন্যের মনোবল বৃদ্ধির কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ধন-সম্পদ দান করার দ্বারা তোমরা ব্যাপকভাবে লোকদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে না; কিন্তু মুখমণ্ডলের প্রসন্নতা ও প্রফুল্ল এবং চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা ব্যাপকভাবে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারবে। ’ (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৫৩৪)

হাসির কদর্য

ইসলাম মানুষকে হাসি-খুশি থাকতে এবং অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে বললেও কিছু হাসির নিন্দাও করেছে। যেমন—

১. উদাসীনতার হাসি : যে হাসি মানুষের দায়িত্ববোধ, ইহকালীন ও পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে উদাসীনতার প্রতীক তা থেকে মহানবী (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কান্না করতে। ’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৫)

২. দ্বিন নিয়ে বিদ্রুপের হাসি : আল্লাহ এই শ্রেণির মানুষকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘তোমরা কি এই কথায় বিস্ময়বোধ করছ! এবং হাসি-ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ না? তোমরা তো উদাসীন। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৫৯-৬১)

৩. মুমিনদের নিয়ে ঠাট্টার হাসি : পবিত্র কোরআনে মুমিনদের নিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ বলবেন, তোরা হীন অবস্থায় এখানে থাক্ এবং আমার সঙ্গে কোনো কথা বলিস্ না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, আপনি আমাদের ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। কিন্তু তাদের নিয়ে তোমরা এত ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১০৮-১১০)

৪. লোক হাসানোর জন্য মিথ্যা বলা : মিথ্যা কথা বলে মানুষকে হাসানো নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মানুষদের হাসানোর জন্য কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে ধ্বংস হোক, সে ধ্বংস হোক। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৫)

৫. নিয়ন্ত্রণহীন হাসি : ইসলাম মানুষকে অসংযত ও নিয়ন্ত্রণহীন হাসি থেকে নিষেধ করেছে। কেননা তাতে নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বেশি পরিমাণ হেসো না। নিশ্চয়ই অধিক পরিমাণ হাসি অন্তরকে মৃত করে দেয়। ’

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৩)

আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে সবাইকে সহাস্য ও আনন্দময় জীবন দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!