হক কথা বলা মুমিনের বিশেষ গুণ।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের কাছে হক কথা বলা। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭৪)
ইসলামে বাকস্বাধীনতার কিছু নমুনা
আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এক জানাজায় ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রা.)সহ অনেক সাহাবি ছিলেন। এ অবস্থায় এক বেদুঈন এসে কিছু সম্পদ দাবি করে এবং চাদর ধরে হেঁচকা টান মারে। তাতে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে ওমর (রা.) বলেন, হে আল্লাহর শত্রু, তুমি আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে এমন বেয়াদবি করছ ? যদি রাসুল (সা.) এখানে না থাকতেন, তাহলে এই তরবারি দিয়ে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম ! এ সময় রাসুল (সা.) ধীরস্থিরভাবে ওমরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
অতঃপর বলেন, হে ওমর, আমরা তোমার কাছ থেকে আশা করেছিলাম যে তুমি আমাকে তার দাবিটি সত্বর পূরণের কথা বলবে এবং তাকে ভদ্র ব্যবহার শিক্ষা দেবে। তুমি যাও তার দাবি পূরণ করো এবং তাকে অন্যদের চেয়ে ২০ সা খাদ্যবস্তু বেশি দাও। ’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৮৮)
একদিন ওমর (রা.)-এর স্ত্রী তাকে বলেন, আপনি কি জানেন আপনার কন্যা হাফসা তার স্বামী রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করেছে? এ কথা শুনে ওমর (রা.) ক্রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং চাদর গায়ে দিয়ে সোজা হাফসার গৃহে চলে যান। অতঃপর তাকে বলেন, হে হাফসা, তুমি কি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিতর্ক করেছ, যে জন্য তিনি সারা দিন ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন? হাফসা বলেন, আল্লাহর কসম আমরা তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করেছি।
তখন ওমর বলেন, আমি তোমাকে আল্লাহর প্রতিশোধ ও তাঁর রাসুলের ক্রোধ থেকে সাবধান করছি। অতঃপর তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়া উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামাহর কক্ষে প্রবেশ করলেন ও তাঁকে একই কথা বলেন। জবাবে উম্মে সালামাহ (রা.) বলেন, আপনি কি আল্লাহর রাসুল ও তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করবেন? ওমর (রা.) বলেন, এ কথা আমার মনে দারুণভাবে দাগ কাটল।
অতঃপর আমি আয়েশার কক্ষে প্রবেশ করলাম ও তাকে বললাম, হে আবু বকরের কন্যা, তোমরা কি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দিয়েছ? জবাবে আয়েশা (রা.) বলেন, এতে আমার ও আপনার কী সমস্যা, হে ইবনুল খাত্তাব, আপনি আপনার মেয়েকে উপদেশ দিন। (বুখারি, হাদিস : ৪৯১৩)
জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের পর অষ্টম হিজরির শাওয়াল মাসে হুনাইন যুদ্ধের গনিমত বণ্টনের সময় বনু তামিম গোত্রের নওমুসলিম বেদুঈন হুরকুস বিন জুহায়ের জুল-খুওয়াইসিরাহ নামক জনৈক ন্যাড়ামুণ্ড ঘন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি বলে ওঠে, ‘হে মুহাম্মদ, ন্যায়বিচার করুন! জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, তোমার ধ্বংস হোক! যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তবে কে ন্যায়বিচার করবে? যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তাহলে তুমি নিরাশ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ’
তখন ওমর (রা.) দাঁড়িয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে ছেড়ে দিন, এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দিই। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই! লোকেরা বলবে, আমি আমার সঙ্গীদের হত্যা করছি। নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি ও তার সঙ্গীরা কোরআন তিলাওয়াত করে। যা তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়, যেমন শিকার হতে তীর বেরিয়ে যায়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৬৩)
একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর সামনে এসে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি তাকে বলেন, ‘স্থির হও! আমি কোনো বাদশাহ নই। আমি একজন কুরাইশ নারীর সন্তান মাত্র। যিনি শুকনা গোশত ভক্ষণ করতেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১২)
এ ঘটনায় বাস্তব জীবনে রাসুল (সা.)-এর বিনয় ও নিরহংকার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।
আয়েশা (রা.)-এর মুক্ত দাসী বারিরাহ তার ক্রীতদাস স্বামী মুগিস থেকে পৃথক হতে চায়। কিন্তু মুগিস তাকে ছাড়তে চায় না। বারিরাহকে পাওয়ার জন্য সে মদিনার অলিগলিতে যাকে পায় তাকে ধরে কাঁদতে থাকে। তার এই দুঃখে ব্যথিত হয়ে রাসুল (সা.) স্বীয় চাচা আব্বাস (রা.)-কে বলেন, যদি সে তার স্বামীকে ফিরিয়ে নিত! বারিরাহ এ কথা জানতে পেরে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বলেন, না। ‘আমি শুধু সুপারিশ করছি মাত্র। ’ জবাবে বারিরাহ বলল, তাকে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৮৩)
এভাবেই ইসলাম বাকস্বাধীনতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
Leave a Reply