বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩১, ২০২২
  • 259 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা 

———————–

দীর্ঘ ১১ মাস পর আবার দরজায় কড়া নাড়ছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। পবিত্র এ মাসে মানুষ যাতে সহজে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে তাই বিশ্বের বহু দেশে কর্মঘণ্টা শিথিল করা হয়। জিনিসপত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। পবিত্র মাহে রমজানের সম্মানে এসব পদক্ষেপ নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।

আবার অনেক ব্যবসায়ী এ সময় মানুষকে জিম্মি করে বেশি মুনাফা আদায়েরও চেষ্টা করে। যেহেতু এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, তাই বিভিন্ন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাধারণ নিদারুণ কষ্টে পড়ে যায়। এভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা জঘন্য অপরাধ।

আদি ইবনে কাআব (রা.)-এর এক পুত্র মা-মার ইবনে আবু মা-মার (রা.) বলেন, রাসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জঘন্য অপরাধী ছাড়া কেউ-ই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (মূল্য বৃদ্ধির আশায়) গুদামজাত করে না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৪৭)

প্রিয়নবী (সা.) এ ধরনের অসৎ ব্যবসায়ীদের অভিশাপ দিয়েছেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমদানি পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় এবং মজুদদার অভিশপ্ত। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৩)

অর্থাৎ সৎ ব্যবসায়ী কোরআন-হাদিসের আইন মেনে সঠিক পথে ব্যবসা করার কারণে সে কোনো গুনাহে লিপ্ত না হয়েই মুনাফা অর্জন করে। যা তার জন্য বরকতময়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। এর বিপরীতে যে বেশি মুনাফার আশায় ইসলামী অনুশাসনের তোয়াক্কা না করে, মানুষকে জিম্মি করার জন্য মজুদ করে, সে যতক্ষণ ওই কাজ থেকে ফিরে আসে না, ততক্ষণ গুনাহে লিপ্ত থাকে। কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, তার এই উপার্জনে কোনো কল্যাণ কিংবা বরকত নেই। ফলে অঢেল সম্পদ তাকে সুখ দেয় না। সে শারীরিক ও মানসিক শান্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তার জীবনের আকাশ দুঃখ-দুর্দশা ও দুশ্চিন্তার কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে যায়।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে (বা সমাজে) খাদ্যদ্রব্য মজুদদারি করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে শাস্তি দেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৫)

এ জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) ব্যবসায়ীদের সততা অবলম্বনের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। কারণ মহান আল্লাহ সৎ ব্যবসায়ীদের যেমন জান্নাতে সম্মানজনক মর্যাদা দেবেন, তেমনি অসৎ ব্যবসায়ীদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করাবেন। তাই ব্যবসায়ী সততা অর্জন করা প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য আবশ্যক। রাসুল (সা.) ব্যবসায়ীদের সর্বদা সততা অবলম্বনের প্রতি তাগিদ দিতেন। সৎ উপায়ে ব্যবসার প্রতিদান ও অসৎ উপায়ে ব্যবসার ক্ষতি সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করতেন।

ইসমাঈল ইবনে উবাইদ ইবনে রিফাআ (রা.) থেকে পালাক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (রিফাআ) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের মাঠে রওনা হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের কেনা-বেচায় জড়িত দেখে বলেন, ‘হে ব্যবসায়ীরা,’ তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিল এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকাল।

তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গুনাহগাররূপে উঠানো হবে; কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে, তারা এর ব্যতিক্রম। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২১০)

মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!