ইসলামের দৃষ্টিতে পরনিন্দা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। পবিত্র কোরআনে এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল, এরা কারা? তিনি বলেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেতো (গিবত করত) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)
রাসুল (সা.) পরনিন্দাকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিভাবে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না। ’ (শুআবুল ঈমান)
নাউজুবিল্লাহ, বছরের ১১ মাস পর আমাদের কাছে এসেছে অবারিত রহমত ও ফজিলতের মাস পবিত্র রমজান। যাতে সব আমলের সওয়াব বহু গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যারা এ মাস পেয়েও নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে অক্ষম হবে, মহানবী (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। কিন্তু গিবতের কারণে যদি কারো এ মাসে ক্ষমা না হয়, তবে তার চেয়ে হতভাগা আর কে হবে?
আমরা সাধারণত মনে করি, যে দোষ মানুষের মধ্যে সত্যিই আছে তা চর্চা করলে গিবত হয় না, কারো মধ্যে সত্যিই কোনো দোষ থাকলে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে সময় কাটানো দোষের নয়। অথচ হাদিসের ভাষায় এটিকেই গিবত বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়। তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তাই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ (তুহমত)। যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)
এই পাপের পরকালীন পরিণতি অনেক কঠিন। আমাদের সবার উচিত, পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এ অভ্যাস ত্যাগ করা। মহান আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply