লোভ-লালসা ও অত্যধিক দুনিয়াপ্রীতি মানুষকে সুখী করতে পারে না। পৃথিবীতে লোভী মানুষকে তুষ্ট করার মতো কোনো জিনিস নেই। তাদের চাহিদার সমাপ্তি ঘটাতে পারে একমাত্র মৃত্যু।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যদি আদম সন্তানের দুই উপত্যকা ভরা সম্পদ থাকে, তবু সে তৃতীয়টার আকাঙ্ক্ষা করবে।
আর মাটি ছাড়া আদম সন্তানের পেট কিছুতেই ভরবে না। আর যে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৬)
তাই পৃথিবীতে সুখ-শান্তি পেতে হলে অল্পে তুষ্টির কোনো বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ যা দিয়েছেন, তার ওপর তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর নির্দেশ পালন করা সুখী জীবনের মূল্য সূত্র। সুখী জীবন লাভের এই পদ্ধতিটি মহান আল্লাহ নিজেই বাতলে দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমি তাদের তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব। (সুরা : নাহাল, আয়াত : ৯৭)
বেশির ভাগ তাফসিরবিদের মতে এখানে ‘হায়াতে তাইয়্যেবা’ বলতে দুনিয়ার পবিত্র ও আনন্দময় জীবন বোঝানো হয়েছে। আলী (রা.)-এর (হায়াতে তাইয়্যেবার) অর্থ করেছেন অল্পে তুষ্টি।
দাহহাক বলেন, এখানে ‘হায়াতে তাইয়্যেবা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, হালাল রিজিক ও দুনিয়াতে ইবাদত করার তাওফিক। কোনো কোনো তাফসিরবিদের মতে এর অর্থ আখিরাতের জীবন। হাসান, মুজাহিদ ও কাতাদা বলেন, জান্নাতে যাওয়া ছাড়া কারোরই জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে না। সঠিক কথা হচ্ছে, হায়াতে তাইয়্যেবা এসব অর্থের সবগুলোকেই শামিল করে। (ইবন কাসির)
যার মধ্যে নিয়ামতের শুকরিয়া নেই, যা কিছু পেয়েছে তাতে সে মানসিকভাবে তুষ্ট হতে পারে না, তার চেয়ে দরিদ্র আর কেউ নয়। মানুষের আর্থিক দরিদ্রতাই শুধু দরিদ্রতা নয়; বরং সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা হলো, মানুষের মনের দরিদ্রতা।
একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বলেন, আবু জর, তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবু জর (রা.) বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বলেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)
তাই মানুষের উচিত, অন্তরের দরিদ্রতা দূর করার চেষ্টা করা। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে শেখা, এটিই হবে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা।
আবদুল্লাহ ইবনে উমার ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির ইসলাম কবুল করার সৌভাগ্য হয়েছে, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন এর ওপর পরিতৃপ্ত হওয়ার শক্তি দিয়েছেন, সে-ই (জীবনে) সফলতা লাভ করেছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৬)
মহান আল্লাহ সবাইকে অল্পে তুষ্টি অর্জন করে সুখী জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply