আল্লাহ যেভাবে জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করেন

  • আপডেট সময় রবিবার, জুন ৫, ২০২২
  • 193 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

————————

মানুষের জীবনধারা মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবনে প্রশস্ততা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা জীবনকে সংকীর্ণ করে দেন। আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘বাসিত’ ও ‘কাবিজ’ জীবনধারা নিয়ন্ত্রণের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁর পানেই তোমরা প্রত্যানীত হবে।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৫)আল্লামা ইবনে জারির তাবারি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘প্রাচুর্য ও দীনতা, প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতা কেবল আল্লাহরই হাতে। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যার জন্য ইচ্ছা জীবিকা সংকীর্ণ করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা জীবিকা প্রশস্ত করে দেন। ’ (তাফসিরে তাবারি)

অন্য আয়াতে আল্লাহ আরো স্পষ্টভাবে বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩০)

আল্লাহ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কর্তৃক মানুষের জীবন-জীবিকা ও জীবনধারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। যার কয়েকটি হলো—

সবার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর : মহান আল্লাহই সব জীবের জীবিকার ব্যবস্থা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠের ওপর বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর। তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছু আছে। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)

জীবিকা তিনিই সরবরাহ করেন : আল্লাহই বিভিন্ন উৎস থেকে তাদের জীবিকা সরবরাহ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন, সব বিষয়কে কে নিয়ন্ত্রণ করেন? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বলুন! তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩১)

সব কিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে : জীবন-জীবিকা ও জীবনধারা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে আল্লাহ প্রাত্যহিক জীবনের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমন—আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লোকেরা বলতে লাগল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বেঁধে দিন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলাই মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। তিনিই নিয়ন্ত্রণকারী, অপ্রশস্তকারী, প্রশস্তকারী ও জীবিকা দানকারী। আমি আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হতে চাই যে, তোমাদের কোনো লোক যেন এই দাবি করতে না পারে (আমার বিরুদ্ধে) যে, তার জান-মালের ওপর আমি হস্তক্ষেপ করেছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৩১২)

জীবিকায় আছে তারতম্য : আল্লাহ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুসারে সৃষ্টিজগতের জীবিকা দানে তারতম্য করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি তোমার প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদা উন্নত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; তারা যা জমা করে তা থেকে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উত্কৃষ্টতর। ’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৩২)

মুমিনের জন্য সম্মানজনক জীবিকা : আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য রেখেছেন সম্মানজনক জীবিকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৫০)

উপযোগী জীবনধারা দান : জীবনধারণের জন্য আল্লাহ প্রতিটি জীবকে তার উপযোগী বিধান দান করেছেন। যেমন—মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করবে; আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)

অন্যদিকে বহু প্রাণীকে তিনি প্রতিদিনের জীবিকার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘এমন কত জীবজন্তু রয়েছে, যারা নিজেদের খাদ্য মজুদ রাখে না। আল্লাহই রিজিক দান করেন তাদের ও তোমাদের। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬০)

ভরসাকারীর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট : যেহেতু জীবন-জীবিকার নিয়ন্ত্রণ মহান আল্লাহর হাতে তাই মুমিন তাঁর ওপর নির্ভর করে। আর যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন জীবিকা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই; আল্লাহ সমস্ত কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)

উত্তম জীবন লাভের জন্য দোয়া : আল্লাহ মুমিন বান্দাকে উত্তম জীবনের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০১)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!