মুমিনের জীবনে শালীনতার সৌন্দর্য

  • আপডেট সময় বুধবার, জুলাই ৬, ২০২২
  • 194 পাঠক

ইবরাহিম সুলতান
————-

লজ্জা ও শালীনতা মানুষের জীবনে অপরিহার্য একটি গুণ। এ জন্য আল্লাহ তাআলা মানব ইতিহাসের প্রথম নবী, প্রথম মানুষ আদম (আ.) ও তাঁর সঙ্গিনী হাওয়া (রা.)-কে সৃষ্টির শুরু থেকেই লজ্জাশীলতার গুণ দান করেছেন। যার বিবরণ সবিস্তারে কোরআনে উল্লেখ আছে।

কোরআনে তাদের লজ্জাশীলতার কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘…অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষফলের আস্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল…। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২২)

হাদিসে রাসুল (সা.) এই গুণটির প্রাচীনতার কথা এভাবে বলেছেন, নবুয়তের সূচনাকাল থেকে যে বিষয়গুলো মানুষের মাঝে (অবিচ্ছিন্নভাবে) আছে তার অন্যতম হলো, তুমি যখন নির্লজ্জ হয়ে পড়বে তখন যা ইচ্ছা তা-ই করবে। (বুখারি, হাদিস : ৬১২০)

লজ্জা ঈমানের শাখা : শালীনতা শুধু মানবিক বিষয় নয়; বরং তা ঈমানের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমানের ৭০ বা ৬০-এর অধিক শাখা আছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫)

এমনকি শালীনতাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হিসেবে অভিহিত করেছেন, ‘আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি ধর্মেরই একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আর ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)

শালীনতা কল্যাণের বাহক : শালীনতা মানুষের জীবনে ব্যাপক কল্যাণ বয়ে আনে। ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলছেন, লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোনো কিছুই বয়ে আনে না। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোনো বস্তুর শুধুমাত্র কদর্যই বাড়িয়ে দেয়। আর লজ্জা কোনো জিনিসের সৌন্দর্যই বাড়িয়ে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৪)

শালীনতা জান্নাত লাভের মাধ্যম : লজ্জা-সম্ভ্রম ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং জান্নাতে যাওয়ার অনন্য উপায়। এই প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, লজ্জা-সম্ভ্রম হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হচ্ছে দুর্ব্যবহারের অঙ্গ, আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারীর) জায়গা জাহান্নামে। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯)

কোরআনে শালীন জীবনের দৃষ্টান্ত : লজ্জাশীলতা নারী-পুরুষ সবার জন্য অপরিহার্য হলেও নারীর চরিত্রে এই গুণ যোগ করে এক ভিন্ন মাত্রা। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা। ফেরাউনের রাজপরিষদ একবার নবী মুসা (আ.)-কে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সংবাদ পেয়ে তিনি বেরিয়ে নবী শোয়াইব (আ.)-এর এলাকা মাদয়ানে চলে যান। সেখানে তিনি দেখলেন, মাদয়ানবাসী একটি কূপ থেকে তাদের পশুপালকে পানি খাওয়াচ্ছে। কূপের পাশে রাখাল-জনতার ভিড়। আর একটু দূরে নিজেদের পশু আগলে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন দুই নারী। তখন মুসা (আ.) তাঁদের দূরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলেন।

তাঁরা জানালেন : ‘আমাদের বাবা অতিশয় বৃদ্ধ। তাই পশুগুলোকে পানি খাওয়াতে আমাদের আসতে হয়েছে। কিন্তু রাখালরা এখান থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের পশুদের পানি খাওয়াতে পারি না। ’ তাঁরা দুজন ছিলেন শোয়াইব (আ.)-এর কন্যা। তাঁদের কথা শুনে মুসা (আ.) তাঁদের পশুকে পানি খাইয়ে দেন। এরপর তাঁরা চলে যায়। তিনিও সেখান থেকে চলে আসেন এক গাছের ছায়ায়…। এরপর তাঁদের একজন তাঁর কাছে আবার ফিরে আসেন। কোরআনের ভাষায়, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পায়ে তাঁর কাছে এলো এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর প্রতিদান দিতে। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)

এই আয়াত থেকে নারীদ্বয়ের লজ্জার বিষয়টি স্পষ্ট হয়, রাখালদের ভিড় ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, আর বাবার পক্ষ থেকে অচেনা এক পুরুষের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার সময় নিজেকে লজ্জায় আবৃত করে রাখা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!