আত্মশুদ্ধি লাভের সহজ তিন আমল

  • আপডেট সময় বুধবার, জুলাই ২০, ২০২২
  • 190 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
——————-
মুমিনের জন্য আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা অপরিহার্য। কেননা এর ওপরই নির্ভর করে ব্যক্তির ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য, কল্যাণ ও মুক্তি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে-ই সফলকাম যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং সে-ই ব্যর্থ যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে। ’ (সুরা : শামস, আয়াত : ৯-১০)

প্রাজ্ঞ আলেমরা আত্মশুদ্ধি লাভের তিনটি সহজ ও প্রধান উপায় বর্ণনা করেন।

তা হলো—

১. পার্থিব মোহ ত্যাগ করা : ইসলাম মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করলেও পার্থিব জীবনের মোহে আবদ্ধ হতে নিষেধ করে। কেননা দুনিয়া মোহ কখনো শেষ হওয়ার নয়। তা থেকে মানুষ কখনো বের হয়ে আসতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বৃদ্ধদের অন্তর দুটি বিষয়ে যুবক থেকে যায়। পার্থিব জীবনের ভালোবাসা এবং দীর্ঘ আশা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২০)

আর এই মোহই মানুষকে নানাবিদ অন্যায় কাজে লিপ্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল। (সুনানে বায়হাকি)

মোহ ত্যাগের উপকার : পার্থিব জীবনের মোহ ত্যাগের উপকার হলো—ক. অন্তর আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উপযোগী হয়, খ. পার্থিব জীবনের প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা যায়, গ. দুনিয়ার পেছনে ছোটার কষ্ট ও অনর্থক অস্থিরতা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

২. দুনিয়ার বাস্তবতা জানা : আত্মশুদ্ধির জন্য দ্বিতীয় কাজ হলো পৃথিবী ও তার প্রকৃত রূপ জানা। কেননা শয়তান ও প্রবৃত্তি দুনিয়াকে সুশোভিত করে তোলে। এই বিষয়ে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের দ্বিনকে ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদের প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদের বিস্মৃত হব, যেভাবে তারা তাদের এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে ছিল এবং যেভাবে তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫১)

পার্থিব জীবনের বাস্তবতা জানার উপায় হলো কোরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রতিটি কাজের কারণ ও পরিণতি বিশ্লেষণ করা এবং সেই আলোকে করণীয় নির্ধারণ করা। ঠিক যেভাবে হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেন, কিয়ামত দিন পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহর কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে? সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবিক কী কী আমল করেছে? (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

দুনিয়াকে চেনার উপকার : এই বাস্তবতার জ্ঞান লাভের উপকার হলো—ক. মুমিন সহজেই পার্থিব জীবনের মোহ ত্যাগ করতে পারবে, খ. সে এমন জিনিসের পেছনে ছুটবে না, যা তার জন্য কল্যাণকর নয়, গ. সে দুনিয়া ছেড়ে দুনিয়ার স্রষ্টা ও মালিকের প্রতি মনোযোগী হবে।

৩. দীর্ঘ আশা ত্যাগ করা : আল্লাহ পথের সাধকরা যখন দুনিয়ার প্রকৃত রূপ দেখতে পাবে, তখন তারা পার্থিব জীবনের ব্যাপারে দীর্ঘ আশা পরিত্যাগ করে। দীর্ঘ আশার ব্যাপারে বর্ণিত আছে, ‘হে লোকেরা! নিশ্চয়ই সময় গুটিয়ে যাচ্ছে, বয়স নিঃশেষ হচ্ছে, কালের পরিক্রমায় দেহ ক্ষয় হচ্ছে, রাত-দিন পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাচ্ছে। রাত-দিন বহু দূরবর্তী বিষয়কে নিকটবর্তী এবং সব নতুন বিষয়কে পুরাতন করে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় হে আল্লাহর বান্দারা, কুপ্রবৃত্তির ব্যাপারে উদাসীন হয়ো না এবং স্থায়ী নেক আমলে আগ্রহী হও। ’ (সিরাজুল মুলুক : ১/৯৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দুনিয়ায় কম উপার্জন করো যেন স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারো, পাপ কমিয়ে আনো যেন মৃত্যু সহজ হয়, তুমি তোমার পিতাকে কোথায় রেখে এসেছ তা খেয়াল করো। কেননা তোমার শিরা-উপশিরা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। (মুসনাদে শিহাব, হাদিস : ৬৩৮)

দীর্ঘ আশা ত্যাগের উপকার : মানুষ পার্থিব জীবনের ব্যাপারে দীর্ঘ আশা ত্যাগ করার উপকারগুলো হচ্ছে—ক. কোনো কিছু না পাওয়ার কষ্ট ও আক্ষেপ থাকবে না, খ. পরকালের আশা জাগ্রত হবে এবং আমলে মানসিক প্রশান্তি আসবে, গ. ফলে ঈমান ও আমল সুন্দর করার অবকাশ আসবে। আল্লাহ সবাইকে আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের তাওফিক দিন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!