হাসি-কান্না ও আল্লাহর ভয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
  • 213 পাঠক

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ

—————————-

মানবজীবনে সাফল্যের সোপান মহান আল্লাহর ভয় তথা ‘তাকওয়া’ এবং তা মানব মর্যাদার মানদণ্ড। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে সম্মানিত যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৩)

আল্লাহর ভয় ছাড়া খাঁটি মুসলমান হওয়া যায় না। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় করো, যেমন ভয় করা উচিত এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।

’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১০২)
আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে শুনেছি, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া দান করবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে ওই ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; আর তার চোখ থেকে পানি ঝরে। ’ (বুখারি)

ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেছেন, ‘দুটি চোখকে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না। প্রথম হলো সেই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; দ্বিতীয় হলো সেই চোখ, যা আল্লাহর পথে (সীমান্ত) প্রহরায় জেগে থাকে। ’ (তিরমিজি)

হাসি-কান্না মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘নিশ্চয়ই তিনি হাসান এবং তিনি কাঁদান। ’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৪৩)

রাসুল (সা.) কম হাসতেন, বেশি কাঁদতেন। মানুষকে কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে…। ’ (বুখারি)

রসিকতা ও কৌতুকের মাধ্যমে লোক হাসানো সম্পর্কে সতর্ক করে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক। সে নিপাত যাক। ’ (তিরমিজি)

কান্না গুনাহ মাফের উপায়। উকবাহ ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলাম, (হে আল্লাহর রাসুল!) মুক্তির উপায় কী? রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি নিজের মুখের নিয়ন্ত্রণ করো, নিজের ঘরে পড়ে থাকো এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করো। ’ (তিরমিজি)

চোখের পানির ওজন অনেক বেশি। আবু হাজেম (রহ.) বলেন, জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে একজনকে ক্রন্দনরত দেখলেন। জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, সে কে? রাসুল (সা.) জবাব দিলেন, সে অমুক। তারপর জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘আমরা ফেরেশতাকুল আদম সন্তানের সব আমল পরিমাপ করতে পারি, কান্না ছাড়া। ’ (কুরতুবি)

মহান আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভরসা ছাড়া মুক্তির উপায় নেই। মানুষ যে কত অসহায় ও নিরুপায় তা বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখতে পারবে না—

(এক) মিজানের (আমল পরিমাপক যন্ত্র) কাছে যতক্ষণ না জানতে পারবে যে তার নেকির পাল্লা ভারী হয়েছে, না হালকা।

(দুই) আমলনামা পেশ করার সময়, যখন বলা হবে এসো, তোমার আমলনামা পাঠ করো, যতক্ষণ না জানতে পারবে যে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হচ্ছে, না পিঠের পেছন থেকে বাম হাতে। (তিন) পুলসিরাতের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার সময়, যখন তা জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা হবে। ’ (আবু দাউদ)

অন্যদিকে অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টির উপায় ও অব্যাহত প্রয়াস হলো—

১. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা,

২. আল্লাহর কিতাব ও তাঁর আয়াত অনুধাবন করা,

৩. ধর্মীয় আলোচনা মনোযোগের সঙ্গে শোনা।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!