সন্তানের সুরক্ষায় পঠিতব্য দোয়া

  • আপডেট সময় শনিবার, অক্টোবর ৮, ২০২২
  • 216 পাঠক

আলেমা মারিয়া মিম

——————

মা-বাবার কাছে সন্তান হলো হৃদয়ের স্পন্দন। পৃথিবীতে সন্তান যখন প্রথম চোখ মেলে, তখন মা-বাবার খুশির অন্ত থাকে না। সেই সঙ্গে সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে মা-বাবার বাড়তি চিন্তাও যুক্ত হয়। শিশুসন্তানের সুস্থতা-অসুস্থতা, ভালো-মন্দ ও উন্নতি-অবনতির বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় সব সময়।

সন্তানকে এ সময় বিভিন্ন ক্ষতি ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করতে মায়েরা প্রচলিত কুসংস্কারমূলক নানা উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে থাকেন, যা কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে অসমর্থিত। এখানে সন্তানকে জাগতিক নানা কুপ্রভাত ও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে কোরআন ও সুন্নাহসম্মত কয়েকটি করণীয় উল্লেখ করা হলো—
মানুষ ও জিনের ক্ষতি থেকে রক্ষায় করণীয়

সন্তানের বিভিন্ন অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে মা-বাবার প্রথম করণীয় হলো, নবীজি (সা.) থেকে বর্ণিত দোয়া নিয়মিত পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) নিম্নোক্ত দোয়ার মাধ্যমে হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, এই দোয়ার মাধ্যমে তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) ইসমাঈল ও ইসহাকের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

দোয়াটির উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন। ’

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)

তা ছাড়া সকাল-সন্ধ্যা সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করা। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জিন ও মানুষের কুদৃষ্টি থেকে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হলে তিনি এ সুরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকিগুলো পরিত্যাগ করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৫৮)

ভীতিকর পরিস্থিতিতে করণীয়

অনেক সময় ছোট শিশুরা ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। তখন তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং সার্বিক নিরাপত্তা ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে নিজে এবং সন্তানদের বাঁচাতে আল্লাহর কাছে নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়ার মাধ্যমে আশ্রয় চাওয়া। আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তাঁদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এ বাক্যগুলো তাঁর সাবালক সন্তানদের শেখাতেন এবং নাবালকদের জন্য লিখে তা তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। দোয়াটির উচ্চারণ নিম্নরূপ।

উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি, ওয়া শাররি ইবাদিহি, ওয়া মিন হামাজাতিশ শায়াতিনি ওয়া আঁইয়াহদুরুন। ’

অর্থ : ‘আল্লাহর পূর্ণ কলেমাসমূহের দ্বারা তাঁর গজব ও তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট ও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও আমার কাছে তার (শয়তানের) উপস্থিতি থেকে আশ্রয় চাইছি। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৯৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি আমার দ্বিন ও আমার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা। তুমি আমার দোষ গোপন রাখো, আমার ভীত অবস্থায় আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং আমাকে সামনে-পেছনে, ডানে-বামে ও ওপরের দিক থেকে হেফাজত করো। আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিচের দিকে আমাকে ধসিয়ে দেওয়া থেকে। ’ (আদাবুল মুফরাদ, বর্ণনা: ৭০৩)

কল্যাণ কামনা করা

সন্তানের মঙ্গলের জন্য যেকোনো সময় আরবি বা নিজের ভাষায় দোয়া করা। যেমনটি কোরআনুল কারিমে হজরত মারিয়ামের মায়ের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যখন তাকে প্রসব করল। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি এক কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুত কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালোই জানেন। সেই কন্যার মতো কোনো পুত্রই যে নেই। আর আমি তাঁর নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদের তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে। (সুরা অলে ইমরান, আয়াত : ৩৬)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!