যেসব মানসিক কর্ম বর্জনীয়

  • আপডেট সময় সোমবার, অক্টোবর ১৭, ২০২২
  • 183 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

———————

দৈহিক ইবাদতের মতো কিছু মানসিক ইবাদতও রয়েছে। সেখানে রয়েছে করণীয়-বর্জনীয়। নিম্নে এমন কিছু মানসিক কর্ম তুলে ধরা হলো, যেগুলো বর্জনীয়।
প্রবৃত্তির অনুসরণ : এটি মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।

আল্লাহর বিধান পালনে উদাসীন করে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে দাউদ), নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। ’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৬)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ প্রবৃত্তির অনুসরণকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এবং অন্য আয়াতে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার পুরস্কার জান্নাত দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল। ’ (সুরা নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১)

অহংকার : অহংকার হলো প্রথম অপরাধ, যার মাধ্যমে শয়তান মহান আল্লাহর নাফরমানি করে চিরস্থায়ী অভিশপ্ত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদাহ করো, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদাহ করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল, কাজেই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৪)

অহংকার মানুষকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করবে, তাই নবীজি (সা.)-ও উম্মতকে অহংকার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)

হিংসা : হিংসা এমন একটি মানসিক কর্মকাণ্ডের নাম, যা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে মানুষকে দেউলিয়া করে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৩)

আত্মপ্রদর্শন : আত্মপ্রদর্শনও মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করলেও তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্যবান তো সেই, যে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, ঈমান এনেছে শেষ দিবসের ওপর এবং সব ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের ওপর। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৯)

অনর্থক বিষয় নিয়ে চিন্তা করা : মানুষের ওপর আন্দাজে কুধারণা করা, অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করা অন্তরের পাপ। মহান আল্লাহ অন্তরকেও তার কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সে বিষয়ের পেছনে ছোটো না, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর- এগুলোর সব বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!