‘আল্লামা’ মানে ওই আলেম, যিনি সমানহারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, উসুলি, মুতাকাল্লিমে, কারি, মুওয়াররিখ (ইসলামী ঐতিহাসিক), আদিব (আরবি ভাষাবিশেষজ্ঞ), ফালসাফি ইত্যাদি
মুফতি আব্দুল কাদির মাসুম
—————————-
আমাদের সমাজে বেশ মাজলুম একটি শব্দ আল্লামা। আল্লামার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আল্লামা কাকে বলে? শাইখ খাদ্বরি (রহ.) লিখেছেন, ‘ওই আলেমকে আল্লামা বলা হয়, যিনি মানকুল ও মাকুল উভয় শাস্ত্রের জ্ঞানে সমানভাবে পারদর্শী। ’ (শরহুল খাদ্বরি আলা শরহি ইবনি আকিল, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬, তাহকিক : সাঈদ হামাদান)।
‘শরহে জামি’ গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘সুয়ালে কাবুলি’র টীকায় এসেছে—
কেউ যদি প্রশ্ন করে জামি (রহ.) ইবনে হাজিব (রহ.)-কে আল্লামা বলেছেন। অথচ তা ঠিক নয়। কারণ তিনি তো শুধু মানকুলাত শাস্ত্রের আলেম ছিলেন। আর আল্লামা হতে গেলে মাকুলাত ও মানকুলাত উভয় শাস্ত্রে সমান পারদর্শী হতে হয়। জবাবে বলা হবে, যদিও ইবনে হাজিব মানকুলাতের আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধ; কিন্তু মূলত তিনি মাকুলাতেরও আলেম ছিলেন। তবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন মানকুলাতের আলেম হিসেবে। (হাশিয়ায়ে সুওয়ালে কাবুলি, পৃষ্ঠা ২২)
মানকুলাত ও মাকুলাত কাকে বলে
মানকুলাত মানে ওই সব ইলম, যা শ্রুতিনির্ভর এবং নুজুলে ওহির জামানা থেকে পরস্পর ক্রমধারায় বর্ণিত হয়ে এসেছে। আর তা হলো মোট ১২টি শাস্ত্র। যথা :
১. হাদিস ও আসার। ২. তাফসিরের বৃহৎ (মাসুর) অংশ। ৩. কিরাত শাস্ত্র। ৪. তারিখ বা ইতিহাস। ৫. আসমাউর রিজাল ৬. লুগাত বা শব্দ জ্ঞান। ৭. সরফ বা শব্দের রূপান্তর জ্ঞান। ৮. নাহব বা আরবি বাক্য গঠন। ৯. বালাগাত বা আরবি অলংকার শাস্ত্র। ১০. আকায়েদ ও বিশ্বাস। ১১. ফারায়েদ বা মিরাস। ১২. আশআরুল আরব বা আরব্য কবিতা।
আর মাকুলাত মানে ইজেহাদি ও বুদ্ধিভিত্তিক ইলম। আর তা হলো ছয়টি শাস্ত্র। যথা : ১. ফিকাহ ও উসুলে ফিকাহ ২. তাফসিরের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা। ৩. উসুলে হাদিস বা হাদিসের মূলনীতি। ৪. মানতেক বা তর্কশাস্ত্র। ৫. ফালসাফা। ৬. কালাম শাস্ত্র।
তাহলে বোঝা গেল, ‘আল্লামা’ মানে ওই আলেম, যিনি সমানহারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, উসুলি, মুতাকাল্লিমে, কারি, মুওয়াররিখ (ইসলামী ঐতিহাসিক), আদিব (আরবি ভাষাবিশেষজ্ঞ), ফালসাফি ইত্যাদি।
আবার হ্যাঁ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ, মুতাকাল্লিম ইত্যাদি দ্বারা আমাদের মধ্যে প্রচলিত অর্থ নয়; বরং নির্দিষ্ট পরিভাষায় সজ্ঞায়িত অর্থে মুফাসসির-মুহাদ্দিস-ফকিহ উদ্দেশ্য।
এ জন্যই আকাবিরে দেওবন্দের মধ্যে শুধু আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.)-এর নামের আগে ‘আল্লামা’ ব্যবহার করা হতো। তিনি ছাড়া কারো নামের আগে দেওবন্দের আকাবিররা ‘আল্লামা’ যোগ করতেন না। এমনকি কাশ্মীরির উস্তাদ শাইখুল হিন্দ (রহ.)-এর নামের আগেও মাওলানা বলা হতো। তবে তাঁকে ‘বড় মাওলানা’ বলা হতো। পরে ইবরাহিম বিলইয়াবি (রহ.)-এর নামের আগে কোনো কোনো আকাবির আল্লামা ইবরাহিম বিলইয়াবি (রহ.) বলতেন।
Leave a Reply