সাআদ তাশফীন
————–
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর অষ্টম অধস্তন পুরুষ মুসা (আ.)। মুসা (আ.)-এর বাবার নাম ছিল ‘ইমরান’। উল্লেখ্য, মারিয়াম (আ.)-এর পিতার নামও ছিল ‘ইমরান’। যিনি ছিলেন ঈসা (আ.)-এর নানা।
মুসা ও ঈসা উভয় নবীই ছিলেন বনু ইসরাঈল বংশীয় এবং উভয়ে বনু ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ২৩, সুরা আস-সফ, আয়াত : ৬)
প্রতিটি নবীই মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। দোয়া করতেন। মুসা (আ.)-ও তাঁর ব্যতিক্রম নন। নিম্নে মুসা (আ.)-এর ঐতিহাসিক পাঁচটি দোয়া তুলে ধরা হলো, যেগুলো পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে।
প্রথম দোয়া : ‘হে আমার পালনকর্তা, আমার বক্ষ উন্মোচন করে দিন। ’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ২৫)
অর্থাৎ নবুয়তের বিশাল দায়িত্ব বহনের উপযুক্ত জ্ঞান ও দূরদর্শিতার উপযোগী করে দিন এবং আমার হৃদয়কে এমন প্রশস্ত করে দিন, যাতে উম্মতের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে প্রাপ্ত অপবাদ ও দুঃখ-কষ্ট বহনে তা সক্ষম হয়।
দ্বিতীয় দোয়া : ‘আমার কর্ম সহজ করে দিন। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ২৬)
অর্থাৎ নবুয়তের কঠিন দায়িত্ব বহনের কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষেই কোনো কাজ সহজ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ফেরাউনের মতো একজন দুর্ধর্ষ, জালেম ও রক্ত পিপাসু সম্রাটের কাছে গিয়ে দ্বিনের দাওয়াত পেশ করা মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।
তৃতীয় দোয়া : ‘আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে। ’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ২৭) কেননা রেসালাত ও দাওয়াতের জন্য রাসুল ও দাঈকে স্পষ্টভাষী ও বিশুদ্ধভাষী হওয়া একান্ত আবশ্যক। শৈশবে তাঁর ফিরাউনের দেয়া আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলে নিজের গালে পুরে নেওয়ায় তাঁর জিভ পুড়ে যায়। ফলে তাঁর জিহ্বায় জড়তা দেখা দিয়েছিল। মুসা (আ.) নিজের এ ত্রুটি দূর করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করেন।
চতুর্থ দোয়া : ‘আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন উজির নিয়োগ করুন—আমার ভাই হারুনকে। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ২৯-৩০)
আগের তিনটি দোয়া ছিল তাঁর নিজ সত্তা সম্পর্কিত। অতঃপর চতুর্থ দোয়াটি ছিল রেসালাতের দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত। ‘উজির’ অর্থ বোঝা বহনকারী। মুসা (আ.) স্বীয় নবুয়তের বোঝা বহনে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান উপায় হিসেবে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহযোগী প্রার্থনা করে দায়িত্ব পালনে স্বীয় আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং নির্দিষ্টভাবে নিজের বড় ভাই হারুন (আ.)-এর নাম করে অশেষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ ভাই হারুন আজন্ম মিসরেই অবস্থান করার কারণে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল অনেক বেশি। অধিকন্তু তার ওপর ফেরাউনের কোনো ক্রোধ বা ক্ষোভ ছিল না। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত বিশুদ্ধভাষী ব্যক্তি, দ্বিনের দাওয়াত প্রদানের জন্য যা ছিল সবচেয়ে জরুরি।
পঞ্চম দোয়া : ‘এবং তাকে আমার কাজে শরিক করে দিন। ’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৩২)
অর্থাৎ তাকে আমার নবুয়তের কাজে শরিক করে দিন। যাতে আমরা বেশি বেশি আপনার জিকির ও পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৩৩-৩৪)
আল্লাহর দ্বিনের প্রচার ও প্রসারে এবং আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ জরুরি। তাই তিনি সৎ ও নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে বড় ভাই হারুনকে নবুয়তে শরিক করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তা ছাড়া তিনি একটি আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলাম। তাই আমি ভয় করছি যে তারা আমাকে হত্যা করবে। ’ ‘আমার ভাই হারুন, সে আমার অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যের জন্য প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জোগাবে। আমি আশঙ্কা করি যে তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৩৩-৩৪)
ওই পাঁচটি দোয়া শেষ হওয়ার পর সেগুলো কবুল হওয়ার সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুসা, তুমি যা যা চেয়েছ, সবই তোমাকে প্রদান করা হলো। (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৩৬)
Leave a Reply