ইসলামে সুনাগরিকের দায়িত্ব

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
  • 135 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

———————

রাষ্ট্র মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত। প্রতিটি নাগরিকের উচিত, সে নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা। সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করা। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন সুনাগরিকের গুণগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো—

দেশপ্রেমিক হওয়া : মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি সুনাগরিকের স্বভাবজাত বিষয়। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে যেসব নবী ও রাসুল (সা.) মানবজাতির হিদায়াতের জন্য দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হন, তাঁরা প্রত্যেকে আপন দেশ, মাতৃভূমি ও জনগোষ্ঠীকে ভালোবেসেছেন। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।

পবিত্র মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত, তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৬)

রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের অনুগত হওয়া : যে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নয়, সে নাগরিক হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নির্দেশ পালন করো আল্লাহ, রাসুল ও তোমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবানদের।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯)

তবে তারা যদি কোনো পাপের নির্দেশ দেয়, আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেয়, তখন তাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য ততক্ষণ পর্যন্ত অপরিহার্য, যতক্ষণ সে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ না করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৫৫)

রাষ্ট্রীয় সম্পদ হেফাজত করা : রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তায় সজাগ থাকা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। বিশেষ করে মুসলিম ভূখণ্ডের নিরাপত্তায় সজাগ থাকার ব্যাপারে হাদিসে বিশেষ ফজিলতের বর্ণনা করা হয়েছে।

সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন এবং এক রাত সীমান্ত পাহারায় রত থাকে তার জন্য এক মাস সাওম পালন করার (রাত জেগে) ইবাদতের সওয়াব রয়েছে। সে ইন্তেকাল করলেও তার সে আমল (এর সওয়াব) জারি থাকবে, যা সে করত আর সে সব ফিতনা থেকে রক্ষিত থাকবে, আর তাকে তার রিজিক বরাদ্দ করা হবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১৬৮)

বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকা : সুনাগরিক কখনো কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না, কেউ সৃষ্টি করতে চাইলে তাকেও কখনো সহযোগিতা করবে না। কারণ পবিত্র কোরআনে বিশৃঙ্খলাকে হত্যার চেয়েও বেশি গুরুতর পাপ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) হত্যার চেয়ে গুরুতর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯১)

অন্যায়ের প্রতিবাদ করা : ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। এই কাজেই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব। প্রতিটি সুনাগরিকের উচিত, এই গুণে গুণান্বিত হওয়া।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১০)

অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!