কেমন ছিল নবীজি (সা.)-এর বিনয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
  • 141 পাঠক

মাইমুনা আক্তার
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩


নবীজি (সা.) ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। যার সার্টিফিকেট মহান আল্লাহ নিজে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা : কলম, আয়াত : ৪)

সাহাবায়ে কেরামও নবীজির উত্তম আখলাকের সাক্ষী দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, বারাআ বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৪৯)

তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। দোজাহানের বাদশাহ হয়েও তিনি কখনো কারো সঙ্গে অহংকার দেখাননি, বরং প্রত্যেক মানুষকেই তার প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন। দরদি আচরণ করেছেন। নিম্নে নবীজি (সা.)-এর উত্তম আচরণের কিছু স্মৃতি তুলে ধরা হলো—

পরিবারের কাজে সহযোগিতা করতেন : নবীজি (সা.) নিজের কাজ নিজে করতে সংকোচ করতেন না। পরিবারের কাজেও তিনি সহযোগিতা করতেন। আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে অবস্থানকালে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, পরিবারের কাজকর্ম করতেন এবং নামাজের ওয়াক্ত হলে বের হয়ে যেতেন। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৪০)

তাঁর সম্মানে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন না : সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার রীতি প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত ছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) তাঁর সম্মানে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন না, যা ছিল তাঁর বিনয়ের অংশ। আনাস (রা.) বলেন, সাহাবিদের কাছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে তিনি এটা পছন্দ করেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৫৪)

প্রশংসায় বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না : সাধারণত মানুষ তার প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। কেউ প্রশংসা করলে মানুষের অন্য রকম আনন্দের অনুভূতি হয়। কিন্তু নবীজি (সা.) এমনটি পছন্দ করতেন না।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ওমর (রা.)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৪৫)

গরিবকে অবহেলা করতেন না : মানুষ সামান্য কিছু টাকা কিংবা ছোটখাটো পদ-পদবি পেলেই নিজেকে অন্য গ্রহের ভিআইপি ভাবতে পছন্দ করে। নিজের গরিব আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতেও চায় না; কিন্তু নবীজি এমনটি ছিলেন। তিনি গোটা বিশ্বের নবী হয়েও গরিবদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে সংকোচ করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আউফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জিকির অত্যধিক পরিমাণে করতেন এবং অনর্থক কাজ একেবারেই করতেন না আর সালাত দীর্ঘ করতেন, খুতবা সংক্ষেপ করতেন, তিনি বিধবা ও গরিবদের সঙ্গে চলাফেরায় সংকোচ বোধ করতেন না, যাতে তিনি তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। (নাসায়ি, হাদিস : ১৪১৪)

গরিবদের দাওয়াতও কবুল করতেন : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) জমিনে বসতেন। জমিনের ওপর বসে খেতেন, মেষ পালন করতেন এবং ক্রীতদাসের যবের রুটির দাওয়াতও গ্রহণ করতেন। (শুআবুল ঈমান)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, (কেউ তাঁকে খুশবু হাদিয়া দিলে) তিনি (সে) খুশবু ফিরিয়ে দিতেন না এবং বলতেন, নবী (সা.) খুশবু প্রত্যাখ্যান করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯২৯)

বাচ্চাদেরও সালাম দিতেন : সাবিত (রহ.) বলেন, আনাস (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) খেলাধুলারত একদল বালকের কাছে এসে তাদের সালাম দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২০২)

মহান আল্লাহ আমাদের বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!