সুন্দর জীবন গঠনে মহানবীর পাঁচ উপদেশ

  • আপডেট সময় সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
  • 115 পাঠক

মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

————————-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন রাসুলের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত একজন বিখ্যাত সাহাবি। নবীজি তাঁর জন্য দ্বিনের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দোয়া করেছিলেন। প্রিয় এই সাহাবিকে রাসুল (সা.) গুরুত্বপূর্ণ এমন ছয়টি উপদেশ দিয়েছেন, যা প্রতিটি মুমিনের সামগ্রিক জীবনের আলোকবর্তিকাস্বরূপ।

একদিন রাসুল (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে ডেকে নিজের বাহনের পেছনে বসালেন। এরপর তার পিঠে হাত রেখে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যেগুলো দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন? তুমি আল্লাহকে হেফাজত করো, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন।

তুমি আল্লাহকে হেফাজত করো, আল্লাহকে তোমার সম্মুখে পাবে। সুখের সময় আল্লাহকে চেনো, (তাঁর কথা স্মরণে রাখো) দুঃখের সময় তিনি তোমাকে চিনবেন। যখন চাইবে আল্লাহর কাছে চাইবে। আর যখন সাহায্য চাইবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।

জেনে রেখো, জগতের সমস্ত মানুষ মিলে যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তবে ততটুকু্ই পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। পৃথিবীর সবাই একত্র হয়ে যদি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় তবে এর চেয়ে বেশি পারবে না, যা আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। (তাকদির লেখার) কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ভাগ্যলিপি শুকিয়ে গেছে। (এতে আর রদবদল হবে না।) জেনে রেখো, অপ্রীতিকর অবস্থায় ধৈর্যধারণে প্রভূত কল্যাণ আছে। নিশ্চয়ই ধৈর্যই সাহায্য আনে, কষ্টের পর স্বস্তি আসে এবং সংকটের পর আসে প্রশস্ততা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৮০৩)

নিম্নে উল্লেখিত হাদিসের প্রতিটি উপদেশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো—

১. আল্লাহ তাআলার যথাযথ আনুগত্য

উক্ত হাদিসে আল্লাহকে হেফাজত করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান পরিপূর্ণ পালনের মাধ্যমে আল্লাহকে হেফাজত করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে নামাজ। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁর খেলাফতের গভর্নরগণকে লিখে পাঠিয়েছিলেন, ‘তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমার কাছে হলো নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করবে, নামাজের বিষয়ে যথাযথ যত্নবান হবে সে তার গোটা দ্বিনকে হেফাজত করল, আর যে নামাজের বিষয়ে হেলা-অবহেলা করবে সে অন্যান্য সব বিষয়ের মধ্যে আরো বেশি অবহেলাকারী সাব্যস্ত হবে।’ (মুআত্তা মালেক, হাদিস : ৯)

বর্জনীয় বিষয়গুলো হেফাজতের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো, জবান ও লজ্জাস্থানের হেফাজত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তাঁর দুই চোয়াল মধ্যের অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই পায়ের মাঝের অঙ্গ (লজ্জাস্থান) হেফাজত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৯)

২. সুখে-দুঃখে আল্লাহর স্মরণ করা

সুখের সময় আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে উক্ত হাদিসে। কারণ সচ্ছলতা ও স্বনির্ভরতায় অনেকেই আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ আকস্মিক কোনো সংকটের সম্মুখীন হলে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। তাঁকে স্মরণ করতে থাকে। আল্লাহ যখন সংকট নিরসন করে দেন তখন আবারও উদাসীনতা ও অবাধ্যতায় মানুষ লিপ্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। এরপর আল্লাহ যখন তাকে দয়া করেন, তখন মানুষ ভুলে যায় যে বিপদে পড়ে সে এর আগে আল্লাহকে ডেকেছিল।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৮)

৩. আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ও দোয়া করা

দোয়ার মাধ্যমে মহাপরাক্রমশালী মালিকের সঙ্গে একজন নগণ্য বান্দার সেতুবন্ধ তৈরি হয়। তাঁর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হয়। অন্যথায় তিনি অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করে না আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)

৪. তাকদির তথা ভাগ্যলিপির ওপর সন্তুষ্ট থাকা

তাকদিরের ওপর আস্থা ও সন্তুষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে উক্ত হাদিসে। কারণ, মানুষ ও জিনসহ পৃথিবীর যত সৃষ্টি রয়েছে সব কিছুর সূচনা ও সমাপ্তি, ভালো ও মন্দ, উপকার ও অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় কিভাবে ঘটবে এবং এর পরিণাম কী হবে এর সব কিছুই মাখলুক সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। এটাই তাকদির। আল্লাহর এই তাকদির তথা ভাগ্যলিপির ওপর বিশ্বাস করা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব সৃষ্টির তাকদির আসমান ও জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৯১৯)

তবে কবুলযোগ্য দোয়া মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনো কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে, তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনো কোনো দুর্দশার সঙ্গে মোকাবেলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত, হাদিস : ১৫১৯)

৫. ধৈর্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা

ধৈর্যশীলতা কল্যাণকর একটি বৈশিষ্ট্য। এই গুণ যার মধ্যে যত বেশি থাকবে তার প্রাপ্তি ও সফলতা তত সমৃদ্ধ হবে। কারণ ধৈর্যশীল ব্যক্তির সঙ্গী থাকেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

একবার রাসুল (সা.) আনসার সাহাবিদের কিছু লোককে বললেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে রাসুলের এ উপদেশগুলো উপলব্ধি করার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!