নিরপরাধকে অপবাদ দেয়ার কঠিন শাস্তি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
  • 138 পাঠক

আবু তাশফীন
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

———————

নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর যেকোনো অপবাদ দেয়া অত্যন্ত জঘন্য একটি অপরাধ। এটি সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে। মানুষের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা সৃষ্টি করে। কখনো কখনো এর সূত্র ধরে বড় ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হয়। অন্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো মুমিনের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে এই কাজটিকে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ১০৫)

বিশেষ করে ঈমানদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটানো, তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা মারাত্মক ক্ষতিকর কাজ। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের এ ধরনের কাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন।

ইয়াহইয়া ইবনে রাশিদ (রহ.) বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর অপেক্ষায় বসে রইলাম। তিনি বেরিয়ে এসে আমাদের কাছে বসলেন এবং বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোনো হদ বাস্তবায়িত করার পথে বাধা সৃষ্টি করে, সে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা মামলা দেয়, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারের এমন দোষ বলে বেড়ায় যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামিদের আবর্জনার মধ্যে বসবাস করাবেন। অতএব তাকে শিগগিরই তার কথা হতে তাওবা এবং ত্যাগ করা উচিত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৯৭)

অনেক সময় মানুষ ভুল বোঝাবুঝির কারণে নিরপাধ ব্যক্তিকে দোষারোপ করে বসে, তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বসে। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিজের অবস্থান থেকে সরে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত এবং নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছেও ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু কেউ যদি আসল বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরও ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করে, তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।

অন্যের বিরুদ্ধে দুচার কথা বলে দেয়া কিংবা দু-চার কলম লিখে দেওয়াকে আমরা যতটা হালকা বিষয় মনে করি, আল্লাহর কাছে তা মোটেই হালকা বিষয় নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন এটা তোমরা তোমাদের মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে, যাতে তোমাদের কোনো জ্ঞান ছিল না; আর তোমরা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৫)

বিনা অপরাধে মানুষকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের তাদের কৃত কোনো অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয়ই তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৮)

বোঝা গেল, এ ধরনের কাজ ও কথা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। যার পরিণতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই বলেই আমরা এগুলোকে খুব হালকাভাবে নিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হেয় করে মজা নিতে থাকি। অথচ নিরপরাধ মানুষকে অপবাদ দেয়ার প্রতিবাদে পবিত্র কোরআনে একাধিকবার আয়াত নাজিল হয়েছে। তাই আমাদের উচিত, কারো ওপর কোনো দোষের বোঝা চাপানোর আগে, ঠিক মানুষের বিরুদ্ধে ঠিক অভিযোগটি দিচ্ছি কি না, তা যাচাই করা।

মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!