উম্মে আহমাদ ফারজানা
———————-
কথায় বলে, ‘ফুয়েল না দিলে ফাইল চলে না।’ অফিস-আদালতের করুণ বাস্তবতা এটাই যে টেবিলের ওপর থাকা ফাইলও খুঁজে পাওয়া যায় না, যদি না এর জন্য ‘বকশিশ’ নামক কিছু মেলে। ঘুষ আসে হাদিয়া বা উপহারের রূপ ধারণ করে। অথচ ইসলামে হাদিয়া জায়েজ, কিন্তু ঘুষ হারাম। হাদিয়া দ্বারা পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, আর ঘুষ দ্বারা ভালোবাসা নষ্ট হয়।
ঘুষ ও হাদিয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো, হাদিয়ায় আর্থিক কোনো লাভের উদ্দেশ্য থাকে না, কিন্তু ঘুষে আর্থিক লাভের আশা থাকে। ইহুদিদের মধ্যে সুদ ও ঘুষের প্রচলন সব জাতির চেয়ে বেশি। তাদের প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, ‘তারা (ইহুদিরা) মিথ্যা শ্রবণে অধিক আগ্রহী এবং অবৈধ অর্থ (ঘুষ) গ্রহণে অত্যন্ত আসক্ত।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৪২)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে নবী, আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন দোজখে সীমা লঙ্ঘনে ও অবৈধ সম্পদ (ঘুষ) গ্রহণে তৎপর। তারা যা করে, নিশ্চয়ই তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬২)।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই লানত করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩১৩)
অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রাস করা ইসলাম সমর্থন করে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না এবং অন্যের সম্পদ গর্হিত পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তোমরা জেনেশুনে তা বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
সুপারিশ করতে হবে বিনিময়বিহীন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করল এবং সে এর বিনিময়ে হাদিয়াস্বরূপ তাকে কিছু দিল। এ অবস্থায় যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সুদের দরজাগুলোর বড় একটি দরজায় উপস্থিত হলো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৪১)
তিনি আরো বলেন, ‘আমি যাকে (ভাতার বিনিময়ে) কোনো কাজে নিয়োজিত করি, সে যদি তা ছাড়া অন্য কিছু (উৎকাচ) গ্রহণ করে, তাহলে তা হবে খিয়ানত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪৩)
ঘুষ থেকে বাঁচার উপায় হলো—পরকালের ভয়, সম্পদের লোভ বর্জন, আল্লাহভীতি, পার্থিব শাস্তির ব্যবস্থা ও গণসচেতনতা।
Leave a Reply